বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন গল্পঃ পড়তে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন , ধন্যবাদ ।

অদ্ভুত পূর্ণতা ( পার্ট 3) - ভালোবাসার গল্পঃ

গল্পঃ - অদ্ভুত পূর্ণতা 
পার্ট - 3  ( বিঃদ্রঃ পার্ট 1 ও পার্ট 2 )


কাব্য : আমাকে দেখতে কোনদিক থেকে বুড়া মনে হচ্ছে?

--- তানিশা কাব্যর দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আজ বিকেলের কথা গুলো মনে পরতেই তানিশার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে। টেবিলে থাকা এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। ভয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,,,

তানিশা : না মানে,, ভাইয়া আপনি দেখতে অনেক সুদর্শন। মনে হয় আরও ৪০ বছরেও বুড়া হবেন না। আমি এটা বলতে চাইছিলাম যে আপনার তো যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এখন যদি বিয়ে না করেন পরে তো ঠিকি বুড়া হয়ে যাবেন। তাইনা??


--- তানিশাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক ভয় পাচ্ছে। পাশ থেকে নীলা করুণ দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য তানিশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,

কাব্য : আচ্ছা,, তোমার কাছে যে পাত্রী আছে, কে সে??

তানিশা : আপনি যে মেয়েকে পছন্দ করেন আমি তার কথাই বলছি। ( মাথা নিচু করে ) 

কাব্য : তুমি চিনো তাকে? ( রাগী গলায় ) 

তানিশা : না। ( মাথা নাড়িয়ে ) 

কাব্য : তাহলে অযথা এতো কথা বলছো কেন? 

তানিশা : আমি তো আপনার হেল্প করতে চাইছিলাম।

কাব্য : আমি তোমার কাছে হেল্প চাইছি? আর কোনো কাজ নেই তোমার? ( রাগী গলায়।) 

--- বলেই কাব্য তানিশার থেকে চোখ নামিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তানিশা মাথা নিচু করে বসে আছে। বেচারি তানিশা কাব্যর হেল্প করতে এসেছিল। কাব্য এভাবে তার সাথে কথা না বললেও পারতো। মনটা খারাপ করে তানিশা খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেলো। নীলা পিছন থেকে কয়েকবার ডাকার পরেও শুনেনি। নীলা খাওয়া ছেড়ে উঠে কাব্যকে বলল,,,

নীলা : ভাইয়া তুমি এভাবে তানিশার সাথে কথা বললা কেন? ও কি এমন ভুল বলছে? তুমি তো জানোই ও এমন। এটা তো নতুন কিছুনা।

কাব্য : আসলে আমি বুঝতে পারিনি ও মন খারাপ করবে। ( নিচু গলায় ) 

নীলা : এই বাড়িতে ও এমনি এমনি চলে আসেনি। আঙ্কেল আন্টিকে অনেক রিকুয়েস্ট করে নিয়ে এসেছি। তুমি এই আচরণ করবা জানলে কখনোই নিয়ে আসতাম না। আর কখনো ওকে এই বাড়িতে নিয়েও আসবো না।

কাব্য : তুই বললেই হলো নাকি নিয়ে আসবি না? তুই না নিয়ে আসলে আমি নিয়ে আসবো।

--- কাব্য খাওয়া ছেড়ে উঠে নীলার রুমে গিয়ে দেখে তানিশা মন খারাপ করে বিছানার এক কোণে বসে আছে। কাব্য গিয়ে তানিশার পাশে বসলো। তানিশা কাব্যর দিকে একবার তাকিয়ে উঠে যেতে লাগলো। কাব্য তানিশার হাত ধরে নরম সুরে বলল,,,

কাব্য : বসো তোমার সাথে কিছু কথা বলি।

--- তানিশা মাথা নিচু করে বসে পরলো। কাব্য বলল,,,

কাব্য : আচ্ছা মনে করো আমি যে মেয়েটাকে পছন্দ করি সেই মেয়েটা তুমি। এখন তুমি কি আমাকে বিয়ে করবা? 

তানিশা : না। ( মাথা নেড়ে ) 

কাব্য : কেন করবেনা?

তানিশা : কারণ আমি আপনাকে ভালবাসিনা।

কাব্য : exactly... এটাই কারণ সেও আমাকে ভালবাসেনা। তাই আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি চাইলে এখন তার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখতে পারি। যদি সে সম্পর্কটাকে মেনে না নিয়ে বিয়ের জন্য না করে দেয় তখন? 

--- অনেকটা বিনয়ী হয়ে কাব্য কথাটা বলতেই তানিশার মায়া লাগলো। হাজার হোক নীলার ভাই। নীলার জন্য হলেও তার একটু হেল্প করা দরকার এটা ভেবে তানিশা বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আপনি শুধু বলেন কোন মেয়েটা। আমি আর নীলা মিলে ঐ মেয়েকে রাজি করিয়ে ছাড়বো। ও রাজি হবেনা তো ওর চৌদ্দ গুষ্টি রাজি হবে।

কাব্য : যদি বলি তুমি? বিয়ে করবা আমাকে?

--- কাব্যর কথা শুনে তানিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,,,

তানিশা : আমি?

কাব্য : হুম, করবা আমাকে বিয়ে?

তানিশা : জীবনেও না।

কাব্য : সেটাই,, প্রত্যেকটা মেয়ের নিজের একটা ভাললাগা, পছন্দ, অপছন্দ থাকেতেই পারে। তার ভাললাগা, পছন্দটাকে প্রধাণ্য দিয়ে আমি চাই সেও আমাকে ভালবাসুক। আমার রাগ, জেদ, মান অভিমানকে একপাশে রেখে আমার ভালাবাসাকে প্রধাণ্য দিক। আমাদের সংসারটা ভালবাসাময় হোক।

তানিশা : সেটা তো বিয়ের পরেও হতে পারে।

কাব্য : ও তো বিয়ের জন্য রাজিই হচ্ছে না।

তানিশা : ঐ বজ্জাত মেয়ের পুড়া কপাল। ভাইয়া আপনি ঐ মেয়ের কথা ভুলে যান।

--- তানিশা কথা শুনে কাব্য একগাল হেসে বলল,,,

কাব্য : ভালবাসাটা যতো সহজ, ভুলে যাওয়াটা ততো সহজ না। আর তখনকার জন্য sorry... 

তানিশা : আমি কিছু মনে করিনি। নীলার মতো আমিও তো আপনার ছোট বোন। তাইনা? নীলার সাথে এভাবে কথা বললে কি আর নীলা আপনার সাথে রেগে থাকতো নাকি? 

--- কাব্য তানিশার কথার জবাব না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝেমাঝে প্রচন্ড রাগ হয় তানিশার উপর। প্রত্যেকবার কেন নিজেকে নীলার সাথে তুলনা করতে হবে? বেস্ট ফ্রেন্ডের ভাই বলে সারাক্ষণ শুধু ভাইয়া ভাইয়া করবে নাকি?? কাব্য তাকে বোনের নজরে দেখেই না। এটা তানিশা কেন বুঝেনা। কাব্য কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

--- সকাল ১০ টায়, কাব্য অফিসে চলে গেছে। তানিশার ভাই তন্ময় এসেছে তানিশাকে নিয়ে যাবার জন্য। তানিশা কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে নিচে চলে এসেছে। কাব্যর মা তানিশাকে অনেক স্নেহ করে। ওনি তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

কাব্যর মা : মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে আত্মীয়তা করে তোকে সারাজীবনের জন্য আমাদের বাসায় রেখে দেই। কিন্তু আমার ছেলেটা তো এই ব্যাপার এখনো কিছুই বলেনা। 

--- কাব্যর মায়ের কথার আগামাথা তানিশা না বুঝলেও নীলা ঠিকি বুঝেছে। নীলা মুচকি হেসে বলল,,,

নীলা : তোমার ছেলে তোমার ইচ্ছে ঠিকি পূরণ করবে। দেখে নিও,,

কাব্য মা : আল্লাহই ভাল জানে। আর কয়টা দিন থেকে গেলে কি হতো? ( তানিশার গালে হাত দিয়ে ) 

তানিশা : আন্টি নীলাকে বিয়ে দিয়ে দিন। নীলার বিয়ের উপলক্ষে আবার ঘুরতে আসতে পারবো।

--- বলেই তানিশা নীলার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তানিশা তার বাড়িতে চলে এসেছে। 

রাত প্রায় ১২ টা বাজে, কাব্য মোবাইল হাতে নিয়ে তানিশার নাম্বারের দিকে তাকিয়ে আছে। কল দিবে কিনা দিবে না, এমন একটা দ্বিধায় আছে কাব্য। পরক্ষনে কিছু না ভেবে কল দিয়ে দিলো। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে তানিশা ঘুমঘুম গলায় বলল,,,

তানিশা : আসসালামু আলাইকুম। কে?

--- কাব্য চুপ করে বসে আছে, কি বলবে সে? এতো রাতে কেন ফোন দিয়েছে তাকে? ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তানিশা এবার রেগে বলল,,,

তানিশা : ঐ কোন অকর্মার হাড্ডি? কল দিয়ে কথা না বলে এতো রাতে আমার ঘুমের বারটা বাজিয়েছিস। 

কাব্য : আমি। 

তানিশা : আমি আবার কে? তুই কোন মহা মন্ত্রী? তুই আমি বললেই তোকে চিনে ফেলবো? আফ্রিকান গন্ডার কোথাকার। নাম বল,,

কাব্য : আমি নাহিল মাহমুদ কাব্য। ( স্বাভাবিক গলায় ) 

--- সাথে সাথে তানিশা শুয়া থেকে উঠে বসে পরলো। ভয়ে ভয়ে নিচু গলায় বলল,,,

তানিশা : নীলার ভাইয়া?

কাব্য : হুম

তানিশা : sorry ভাইয়া আমি ভাবছি কে না কে হবে। আপনার নাম্বার আমার মোবাইলে save নাই তো,, তাই এভাবে কথা বলছি। ভাইয়া আমি যে আপনার সাথে এমন আচরণ করছি, আপনি ভুলেও নীলাকে বলবেন না। ও জানতে পারলে আমাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে কুচিকুচি করে ফেলবে। ও বলেছিল কখনো যেন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার না করি। ভাইয়া আমার ভুল হইছে। আমাকে ছোট বোন ভেবে মাফ করে দিয়েন।

--- ছোট বোন শুনতেই কাব্য কল কেটে দিলো। এতো রাতে ছোট বোনের কাছে কেউ কল দেয়? ফাজিল মেয়েটা সারাক্ষণ শুধু ছোট বোন আর ভাইয়া ছাড়া কিছুই বুঝেনা। এতটুকু জ্ঞন নেই তানিশার মধ্যে? কাব্য আর কল দিবেনা। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে তানিশার উপর।

তানিশা মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছে কাব্য কল কেটে দিলো কেন? এতো রাতেই বা তাকে কল দিলো কেন? না জানি এখন নীলার কাছে কাব্য তার নামে বিচার দেয়। ভাবতে ভাবতেই তানিশা নীলাকে কল করলো। মোবাইলে কল বাজতেই নীলা কল রিসিভ করে বলল,,,

নীলা : কি হইছে গাধী এতো রাতে কল দিলি কেন?

তানিশা : এই শুননা,, ভাইয়া আমাকে একটু আগে কল দিছিলো।

নীলা : তো আমি কি করবো? খুশিতে নাচবো নাকি?

তানিশা : নাচানাচি পরে করিস। আগে ভাইয়া জিঙ্গেসা কর কেন কল দিছে।

নীলা : ভাইয়া তোকে কল দিছে তুই জিঙ্গেসা কর?

তানিশা : শাঁকচুন্নি, জলহস্তিনী কোথাকার তুই জিঙ্গেসা করলে কি হবে? তোর মুখে কি পোকা পরবে?

নীলা : পারবোনা, আমি এখন ঘুমাচ্ছি।

--- বলেই নীলা কল কেটে দিলো। তানিশা ভাবছে, বজ্জাত মেয়ের এতো বড় সাহস সে ঠাস করে তানিশার কল কেটে দিলো। এখন নীলাকে সামনে পেলে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো। তারপর চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে কুচিকুচি করে রান্না করে জ্বালিয়ে দিতো। এখন কাব্য কেন কল দিছে এটা জানতে হবে। তানিশা কাব্যকে কল দিতেই সে রিসিভ করে কিছু বলার আগে তানিশা বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া তখন কেন কল দিছিলেন?

কাব্য : এই মেয়ে সবসময় এতো ভাইয়া ভাইয়া করো কেন? আমি তোমার কোন দিনের ভাইয়া হ্যা?? ( রাগী গলায় ) 

তানিশা : sorry... না,, মানে,, মনে হয়ে ভুলে আমার মোবাইল থেকে নিজে নিজে কল চলে গেছে। ( ভয়ে ভয়ে )

কাব্য : ভুলে আসেনি, তুমি নিজেই দিয়েছো।

তানিশা : আসলে,, তখন কেন কল দিছিলেন এটা জানার জন্য। ( আমতা আমতা করে ) 

কাব্য : তোমাকে miss করছি তাই।

তানিশা : কেন? ( অবাক হয়ে )

কাব্য : সেটা তুমি বুঝবেনা। যাওয়ার সময় আমাকে বলে যাওনি কেন? ( দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ) 

তানিশা : আমি তো কখনোই আপনাকে বলে আসিনা। বলবো কিভাবে?? আপনি তো তখন অফিসে থাকেন।

কাব্য : একবার কল দিয়ে অন্ততপক্ষে বলতে পারতে।

তানিশা : আপনার নাম্বার আমার মোবাইলে নাই।

কাব্য : তোমার কি কখনো মনে হয়নি যে আমার নাম্বারটা তোমার মোবাইলে থাকা দরকার।

তানিশা : কেন মনে হবে? আপনার নাম্বার দিয়ে আমি কি করবো? নীলার নাম্বার তো আছেই। নীলার থেকেই তো আন্টির খোঁজখবর নিতে পারি। 

কাব্য : আর আমার খোঁজখবর নিতে ইচ্ছে করেনা? ( হতাশ হয়ে ) 

তানিশা : নীলার থেকে সবার খোঁজখবর নেই তো।

--- তানিশা প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে, এতো রাতে তার ঘুম ডিস্টার্ব করে এগুলো বলার জন্য কাব্য তাকে কল দিছে? এখন যদি পারতো কাব্যকে কুচিকুচি করে ব্লেন্ডার করে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলতো। তানিশা বিরক্ত নিয়ে আবার বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আর কিছু বলবেন? আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। 

কাব্য : আচ্ছা ঘুমাও।

--- বলেই কাব্য কল কেটে দিলো। প্রত্যেকবার তানিশাকে নিজের অনুভূতি গুলো বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে কাব্য। তানিশা কেন বুঝেনা কাব্য তাকে কতটা ভালবাসে? আদৌ কি কাব্যর অনুভূতি গুলো কখনো তানিশা বুঝবে? 

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্#গল্প_অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer - তানিশা
part - 6

আবির : আপনি দেখতে অনেক সুন্দর ( মুগ্ধ নয়নে ) 

তানিশা : জানি, কাব্য ভাইয়া সবসময় এই কথাটা বলে। ( বিরক্ত নিয়ে ) 

আবির : কাব্য কে? ( বিষময় নিয়ে )

তানিশা : নীলার ভাই।

আবির : নীলা কে? 

তানিশা : আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

আবির : আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভাই আপনাকে কিভাবে চিনে?

তানিশা : ভাইয়া তো আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। কিছুদিন আগেও তাদের বাসায় ঘুরতে গেছিলাম। ওনি অনেক ভাল মানুষ। আমাকে মেলায় নিয়ে গেছে, তাদের অরণ্যপুর গ্রামের বটতলা নিয়ে গেছে। জায়গাটা অনেক সুন্দর।

--- আবির ছেলেটা কিছুটা ইতস্তত করে বলল,,,

আবির : আপনি কি ওনাকে পছন্দ করেন?

তানিশা : না,, তো। ( মাথা নেড়ে ) 

আবির : ওনি হয়তো আপনাকে অনেক পছন্দ করে। তাইনা??

--- তানিশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, কাব্য কেন তাকে পছন্দ করতে যাবে? কাব্য তো অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু কাকে পছন্দ করে এটা তো কখনো বলেনি, মাঝেমাঝে বলতো তানিশাকে। তার মানে কি কাব্য সত্যি তানিশাকে পছন্দ করে? তানিশাকে চুপ থাকতে দেখে আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি। আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনার মতামতের উপর ভিত্তি করেই আমাদের বিয়ে হবে। যদি আমাদের বিয়ে হয়, আমি কখনো এটা চাইবো না, বিয়ের পর আপনি আপনার ফ্রেন্ড নীলার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কারণ আপনার কথায় এটা স্পষ্ট বুঝা যায়, উনি আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আর আমার স্ত্রীকে কেউ পছন্দ করবে বা অন্য নজরে দেখবে এটা আমি স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিবো না।

--- তানিশা মনেমনে ভাবছে, এই নাইজেরিয়ান উগান্ডার থেকে তো কাব্য ভাইয়া হাজার গুণে ভাল। কাব্য ভাইয়া বলতো যাকে ভালবাসে তার স্বাধীনতা, পছন্দ, অপছন্দ, ভাললাগাকে প্রাধান্য দিয়ে তাকে বিয়ে করবে। এখন সে কি করবে? এই লাল বাদর, কালা ছাগলকে তো জীবনেও বিয়ে করবেনা। কিন্তু তার মা এই মুখ পুরা হনুমানের গলায় তাকে ঝুলিয়েই ছাড়বে। কি করে এই মুখ পুরা হনুমানকে বিয়ে করা থেকে বাচা যায়? তানিশা মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো। আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?

তানিশা : কাব্য ভাইয়ার থেকে দেখতে অনেক খারাপ। কাব্য ভাইয়া দেখতে অনেক সুন্দর, পুরাই ক্রাশ খাওয়ার মতো একজন। আমি খাইনা আরকি, ভাবতাম ওনি অন্য কাউকে পছন্দ করে। আমি ক্রাশ খেয়ে কি লাভ? কিন্তু আজকে জানলাম লাভ আছে, ওনি তো আমাকেই পছন্দ করে। চোখ থাকা কানি, শাঁকচুন্নি নীলা কখনোই এই কথাটা আমাকে বলেনি। পেত্নীটা একবার আমার সামনে আসলে তার চুল গুলো টেনে ছিড়ে, ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারবো। তারপর জিঙ্গেসা করবো কেন বলেনি। ফাজিল মেয়েটার কারণে আজকে আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। ( রাগে গজগজ করে ) 

--- আবির হা করে তানিশা দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি? কিসব আবোল তাবোল বলছে। তানিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আপনার আর কোনো কথা আছে আমার সাথে?

--- ভাইয়া ডাক শুনার সাথে সাথে আবির অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,

আবির : ভাইয়া ডাক শুনার পর আর কি কথা থাকতে পারে? সব কথা শেষ হয়ে গেছে। আর কিছু বাকি নাই।

তানিশা : তাহলে এখানে বসে আছেন কেন? আমার রুম থেকে বাহিরে যান। কতো কষ্ট করে রুমটা গুছিয়েছি।

--- কথাটা বলেই তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবির তার পিছুপিছু রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসলো। তানিশার মা আবিরকে কিছু জিঙ্গেসা করতে যাবে, তখনি বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তানিশার মা উঠে এসে দরজা খোলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে। তানিশার মা তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য হুট করে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো। ভিতরে গিয়ে দেখে তানিশা ড্রয়িংরুমে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে। 

আজ তানিশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে যেটা কাব্য আগে থেকে জানতো না। কথাটা জানার সাথে সাথেই কাব্য তানিশার বাসায় চলে এসেছে। কাব্যকে দেখা মাত্র তানিশা বসা থেকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। কাব্য এখানে কেন এসেছে? তারমানে কি কাব্য সত্যি তাকে ভালবাসে? এখন কাব্যর কি হবে? ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। কাব্য কিছু চিন্তা না করেই তানিশার পাশে এসে বসে পরলো। তানিশার হাত ধরে টেনে তাকেও নিজের পাশে বসিয়ে বলল,,,

কাব্য : আজ তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বলনি যে? ( হাঁপাতে হাঁপাতে ) 

তানিশা : বলবো কিভাবে? আমি তো নিজেই জানতাম না। বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন মা ডেকে বলল তৈরি হবার জন্য। ( মাথা নিচু করে ) 

কাব্য : তোমার পাত্র পছন্দ হয়েছে?

তানিশা : না,, ( করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ) 

--- কথাটা শুনার সাথে সাথে কাব্য চোখদুটি বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,,,

কাব্য : আলহামদুলিল্লাহ।

--- তানিশা, তার মা আর পাত্রপক্ষের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই হাবলার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মাথায় কিছুই ঢুকছেনা এখানে আসলে হচ্ছেটা কি? তানিশা সবার দিকে একবার তাকিয়ে হুট করে কাব্যকে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন?

--- উপস্থিত সবাই আর কাব্য হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য কি ভুল কিছু শুনছে নাকি তানিশা সত্যি বলছে? কাব্য কিছু বলতে পারছেনা, শুধু হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার অবাকের সীমানা পেরিয়ে যেন বহু দূর চলে গেছে। কিছু বলবে কিভাবে?? তানিশা আবারও বলল,,,

তানিশা : ও ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন? নাকি আমি এই আবুল মার্কা ক্যাবলা ক্লান্তকে বিয়ে করে ফেলবো? 

--- আবির এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিল। তানিশার কথাটা শুনার সাথে সাথে রেগে গিয়ে তার বাবাকে বলল,,,

আবির : বাবা! প্রথমে তো মনে করছি এই মেয়ে আধ পাগল। এখন দেখি পুরাই মানসিক রুগি। বাবা আমি এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবো না। 

--- বলেই আবির গজগজ করে তার পরিবারকে নিয়ে চলে গেলো। পরক্ষনে তানিশার মা রেগে তানিশাকে বলল,,,

তানিশার মা : তানিশা তুই কি কখনো মানুষ হবিনা?

তানিশা : মা আমাকে দেখে কি তোমার মানুষ মনে হচ্ছে না? আমি অমানুষের কি করলাম?? ( করুণ দৃষ্টিতে ) 

--- তানিশার কথায় ধ্যান না দিয়ে তার মা কাব্যকে বলল,,,

তানিশার মা : কাব্য তুমি হঠাৎ এই সময় এখানে কেন এসেছো? 

--- কাব্য বসা থেকে উঠে তানিশার মাকে অনেক বিনয়ীর সাথে বলতে লাগলো,,,

কাব্য : আন্টি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি,, 

তানিশার মা : হ্যা বাবা কি বলবে বলো?

কাব্য : শর্টকাট বলি?

তানিশার মা : তোমার ইচ্ছা।

কাব্য : আমি তানিশাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। আমি ওকে হারাতে চাই না। আপনি যদি অনুমতি দেন,,

--- কাব্য তার কথা শেষ করার আগে তানিশার মা কঠোরতার সাথে বলতে লাগলো,,,

তানিশার মা : আমিও শর্টকাট কথা বলতে পছন্দ করি। আমি অনুমতি তখনি দিবো, যখন তুমি তোমার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে। এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পছন্দ না, পরিবার নিয়ে আসো তারপর বসে কথা বলবো।

--- কথাটা বলেই ওনি সোফা থেকে উঠে পরলো।

কাব্য : আন্টি আমাকে কি ১০ মিনিট সময় দেয়া যাবে?

তানিশার মা : তারচেয়েও অনেক বেশি সময় নিতে পারো। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার পরিবারের মতামতের উপরেই আমার সিদ্ধান্ত অটল থাকবে।

--- কাব্যর মা তাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,,,

কাব্যর মা : তার কোনো প্রয়োজন নেই আপা। আমার তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই। আমার কাব্য যার সাথে সুখি হবে আমি তাকেই নিজের মেয়ের মতো করে মেনে নিবো। আর তানিশাকে আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ।

--- তানিশার মা পিছনে ফিরে দেখে কাব্যর মা আর নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটি নাচিয়ে একটা দুষ্টামির হাসি দিলো। কাব্যর আর বুঝতে বাকি রইলোনা তার মাকে নীলাই মানিয়ে নিয়ে এসেছে। নীলার মতো এমন একটা বোন থাকলে পৃথিবীতে সব ভাইয়া শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ হতো। 

সকালে তানিশা নীলাকে কল দিয়ে পাত্রপক্ষের কথা জানাতেই নীলা কাব্যকে বিষয়টা জানিয়ে দিলো। আর কাব্য অফিস থেকে ছুটে চলে এলো তার প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারো হওয়ার আগে নিজের করে নেয়ার জন্য। অপরদিকে নীলা তার মাকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে তানিশাদের বাসায়। পৃথিবীতে কাব্যর হাসি মুখটাই নীলার কাছে আত্মতৃপ্তির কারণ। কারণ বাবা না থাকলেও কাব্য কখনো তাকে বাবার অভাব বুঝতে দেইনি, তার প্রত্যেকটা চাহিদা নির্দ্ধিধায় পূরন করেছে। আর নীলার খুশিতেই যেন কাব্য সুখ খোঁজে পেতো।

নীলা তানিশার মায়ের সামনে এসে বলল,,,

নীলা : আন্টি আপনি তো আমাদের সম্পর্কে সব জানেন। আমরা আহামরি কোনো ধনি না। তবে হ্যা ভাইয়া ব্যাংকের জব করে ভাল মানের সেলারি পায়। ছেলে হিসেবে কেমন আশা করি এটা আপনাকে বলতে হবেনা। আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, আমার ভাইয়ের জন্য আমি তানিশাকে নিজের ভাবি বানাতে চাই। আমার বিশ্বাস তানিশা ভাইয়ার সাথে অনেক সুখি হবে। বাকিটা আপনার মতামত।

--- তানিশার মা ভ্রু কুচকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছেনা। কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। এখন তানিশার মা কি বলবে তাকে? তানিশা নীলার পাশে এসে তার হাত ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,

তানিশা : মা জীবনেও মানবে না রে,, আমি জানি।

নীলা : তুই চুপ থাক। ( ধমক দিয়ে ) 

--- নীলা ভয়ে ভয়ে তানিশার মাকে আবারও বলল,,,

নীলা : আন্টি হ্যা না কিছু তো বলেন?

আবির : আপনি দেখতে অনেক সুন্দর ( মুগ্ধ নয়নে ) 

তানিশা : জানি, কাব্য ভাইয়া সবসময় এই কথাটা বলে। ( বিরক্ত নিয়ে ) 

আবির : কাব্য কে? ( বিষময় নিয়ে )

তানিশা : নীলার ভাই।

আবির : নীলা কে? 

তানিশা : আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

আবির : আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভাই আপনাকে কিভাবে চিনে?

তানিশা : ভাইয়া তো আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। কিছুদিন আগেও তাদের বাসায় ঘুরতে গেছিলাম। ওনি অনেক ভাল মানুষ। আমাকে মেলায় নিয়ে গেছে, তাদের অরণ্যপুর গ্রামের বটতলা নিয়ে গেছে। জায়গাটা অনেক সুন্দর।

--- আবির ছেলেটা কিছুটা ইতস্তত করে বলল,,,

আবির : আপনি কি ওনাকে পছন্দ করেন?

তানিশা : না,, তো। ( মাথা নেড়ে ) 

আবির : ওনি হয়তো আপনাকে অনেক পছন্দ করে। তাইনা??

--- তানিশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, কাব্য কেন তাকে পছন্দ করতে যাবে? কাব্য তো অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু কাকে পছন্দ করে এটা তো কখনো বলেনি, মাঝেমাঝে বলতো তানিশাকে। তার মানে কি কাব্য সত্যি তানিশাকে পছন্দ করে? তানিশাকে চুপ থাকতে দেখে আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি। আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনার মতামতের উপর ভিত্তি করেই আমাদের বিয়ে হবে। যদি আমাদের বিয়ে হয়, আমি কখনো এটা চাইবো না, বিয়ের পর আপনি আপনার ফ্রেন্ড নীলার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কারণ আপনার কথায় এটা স্পষ্ট বুঝা যায়, উনি আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আর আমার স্ত্রীকে কেউ পছন্দ করবে বা অন্য নজরে দেখবে এটা আমি স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিবো না।

--- তানিশা মনেমনে ভাবছে, এই নাইজেরিয়ান উগান্ডার থেকে তো কাব্য ভাইয়া হাজার গুণে ভাল। কাব্য ভাইয়া বলতো যাকে ভালবাসে তার স্বাধীনতা, পছন্দ, অপছন্দ, ভাললাগাকে প্রাধান্য দিয়ে তাকে বিয়ে করবে। এখন সে কি করবে? এই লাল বাদর, কালা ছাগলকে তো জীবনেও বিয়ে করবেনা। কিন্তু তার মা এই মুখ পুরা হনুমানের গলায় তাকে ঝুলিয়েই ছাড়বে। কি করে এই মুখ পুরা হনুমানকে বিয়ে করা থেকে বাচা যায়? তানিশা মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো। আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?

তানিশা : কাব্য ভাইয়ার থেকে দেখতে অনেক খারাপ। কাব্য ভাইয়া দেখতে অনেক সুন্দর, পুরাই ক্রাশ খাওয়ার মতো একজন। আমি খাইনা আরকি, ভাবতাম ওনি অন্য কাউকে পছন্দ করে। আমি ক্রাশ খেয়ে কি লাভ? কিন্তু আজকে জানলাম লাভ আছে, ওনি তো আমাকেই পছন্দ করে। চোখ থাকা কানি, শাঁকচুন্নি নীলা কখনোই এই কথাটা আমাকে বলেনি। পেত্নীটা একবার আমার সামনে আসলে তার চুল গুলো টেনে ছিড়ে, ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারবো। তারপর জিঙ্গেসা করবো কেন বলেনি। ফাজিল মেয়েটার কারণে আজকে আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। ( রাগে গজগজ করে ) 

--- আবির হা করে তানিশা দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি? কিসব আবোল তাবোল বলছে। তানিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আপনার আর কোনো কথা আছে আমার সাথে?

--- ভাইয়া ডাক শুনার সাথে সাথে আবির অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,

আবির : ভাইয়া ডাক শুনার পর আর কি কথা থাকতে পারে? সব কথা শেষ হয়ে গেছে। আর কিছু বাকি নাই।

তানিশা : তাহলে এখানে বসে আছেন কেন? আমার রুম থেকে বাহিরে যান। কতো কষ্ট করে রুমটা গুছিয়েছি।

--- কথাটা বলেই তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবির তার পিছুপিছু রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসলো। তানিশার মা আবিরকে কিছু জিঙ্গেসা করতে যাবে, তখনি বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তানিশার মা উঠে এসে দরজা খোলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে। তানিশার মা তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য হুট করে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো। ভিতরে গিয়ে দেখে তানিশা ড্রয়িংরুমে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে। 

আজ তানিশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে যেটা কাব্য আগে থেকে জানতো না। কথাটা জানার সাথে সাথেই কাব্য তানিশার বাসায় চলে এসেছে। কাব্যকে দেখা মাত্র তানিশা বসা থেকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। কাব্য এখানে কেন এসেছে? তারমানে কি কাব্য সত্যি তাকে ভালবাসে? এখন কাব্যর কি হবে? ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। কাব্য কিছু চিন্তা না করেই তানিশার পাশে এসে বসে পরলো। তানিশার হাত ধরে টেনে তাকেও নিজের পাশে বসিয়ে বলল,,,

কাব্য : আজ তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বলনি যে? ( হাঁপাতে হাঁপাতে ) 

তানিশা : বলবো কিভাবে? আমি তো নিজেই জানতাম না। বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন মা ডেকে বলল তৈরি হবার জন্য। ( মাথা নিচু করে ) 

কাব্য : তোমার পাত্র পছন্দ হয়েছে?

তানিশা : না,, ( করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ) 

--- কথাটা শুনার সাথে সাথে কাব্য চোখদুটি বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,,,

কাব্য : আলহামদুলিল্লাহ।

--- তানিশা, তার মা আর পাত্রপক্ষের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই হাবলার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মাথায় কিছুই ঢুকছেনা এখানে আসলে হচ্ছেটা কি? তানিশা সবার দিকে একবার তাকিয়ে হুট করে কাব্যকে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন?

--- উপস্থিত সবাই আর কাব্য হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য কি ভুল কিছু শুনছে নাকি তানিশা সত্যি বলছে? কাব্য কিছু বলতে পারছেনা, শুধু হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার অবাকের সীমানা পেরিয়ে যেন বহু দূর চলে গেছে। কিছু বলবে কিভাবে?? তানিশা আবারও বলল,,,

তানিশা : ও ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন? নাকি আমি এই আবুল মার্কা ক্যাবলা ক্লান্তকে বিয়ে করে ফেলবো? 

--- আবির এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিল। তানিশার কথাটা শুনার সাথে সাথে রেগে গিয়ে তার বাবাকে বলল,,,

আবির : বাবা! প্রথমে তো মনে করছি এই মেয়ে আধ পাগল। এখন দেখি পুরাই মানসিক রুগি। বাবা আমি এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবো না। 

--- বলেই আবির গজগজ করে তার পরিবারকে নিয়ে চলে গেলো। পরক্ষনে তানিশার মা রেগে তানিশাকে বলল,,,

তানিশার মা : তানিশা তুই কি কখনো মানুষ হবিনা?

তানিশা : মা আমাকে দেখে কি তোমার মানুষ মনে হচ্ছে না? আমি অমানুষের কি করলাম?? ( করুণ দৃষ্টিতে ) 

--- তানিশার কথায় ধ্যান না দিয়ে তার মা কাব্যকে বলল,,,

তানিশার মা : কাব্য তুমি হঠাৎ এই সময় এখানে কেন এসেছো? 

--- কাব্য বসা থেকে উঠে তানিশার মাকে অনেক বিনয়ীর সাথে বলতে লাগলো,,,

কাব্য : আন্টি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি,, 

তানিশার মা : হ্যা বাবা কি বলবে বলো?

কাব্য : শর্টকাট বলি?

তানিশার মা : তোমার ইচ্ছা।

কাব্য : আমি তানিশাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। আমি ওকে হারাতে চাই না। আপনি যদি অনুমতি দেন,,

--- কাব্য তার কথা শেষ করার আগে তানিশার মা কঠোরতার সাথে বলতে লাগলো,,,

তানিশার মা : আমিও শর্টকাট কথা বলতে পছন্দ করি। আমি অনুমতি তখনি দিবো, যখন তুমি তোমার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে। এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পছন্দ না, পরিবার নিয়ে আসো তারপর বসে কথা বলবো।

--- কথাটা বলেই ওনি সোফা থেকে উঠে পরলো।

কাব্য : আন্টি আমাকে কি ১০ মিনিট সময় দেয়া যাবে?

তানিশার মা : তারচেয়েও অনেক বেশি সময় নিতে পারো। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার পরিবারের মতামতের উপরেই আমার সিদ্ধান্ত অটল থাকবে।

--- কাব্যর মা তাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,,,

কাব্যর মা : তার কোনো প্রয়োজন নেই আপা। আমার তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই। আমার কাব্য যার সাথে সুখি হবে আমি তাকেই নিজের মেয়ের মতো করে মেনে নিবো। আর তানিশাকে আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ।

--- তানিশার মা পিছনে ফিরে দেখে কাব্যর মা আর নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটি নাচিয়ে একটা দুষ্টামির হাসি দিলো। কাব্যর আর বুঝতে বাকি রইলোনা তার মাকে নীলাই মানিয়ে নিয়ে এসেছে। নীলার মতো এমন একটা বোন থাকলে পৃথিবীতে সব ভাইয়া শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ হতো। 

সকালে তানিশা নীলাকে কল দিয়ে পাত্রপক্ষের কথা জানাতেই নীলা কাব্যকে বিষয়টা জানিয়ে দিলো। আর কাব্য অফিস থেকে ছুটে চলে এলো তার প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারো হওয়ার আগে নিজের করে নেয়ার জন্য। অপরদিকে নীলা তার মাকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে তানিশাদের বাসায়। পৃথিবীতে কাব্যর হাসি মুখটাই নীলার কাছে আত্মতৃপ্তির কারণ। কারণ বাবা না থাকলেও কাব্য কখনো তাকে বাবার অভাব বুঝতে দেইনি, তার প্রত্যেকটা চাহিদা নির্দ্ধিধায় পূরন করেছে। আর নীলার খুশিতেই যেন কাব্য সুখ খোঁজে পেতো।

নীলা তানিশার মায়ের সামনে এসে বলল,,,

নীলা : আন্টি আপনি তো আমাদের সম্পর্কে সব জানেন। আমরা আহামরি কোনো ধনি না। তবে হ্যা ভাইয়া ব্যাংকের জব করে ভাল মানের সেলারি পায়। ছেলে হিসেবে কেমন আশা করি এটা আপনাকে বলতে হবেনা। আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, আমার ভাইয়ের জন্য আমি তানিশাকে নিজের ভাবি বানাতে চাই। আমার বিশ্বাস তানিশা ভাইয়ার সাথে অনেক সুখি হবে। বাকিটা আপনার মতামত।

--- তানিশার মা ভ্রু কুচকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছেনা। কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। এখন তানিশার মা কি বলবে তাকে? তানিশা নীলার পাশে এসে তার হাত ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,

তানিশা : মা জীবনেও মানবে না রে,, আমি জানি।

নীলা : তুই চুপ থাক। ( ধমক দিয়ে ) 

--- নীলা ভয়ে ভয়ে তানিশার মাকে আবারও বলল,,,

নীলা : আন্টি হ্যা না কিছু তো বলেন?

--- তানিশার মা কাব্যর সামনে দাড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,

তানিশার মা : আমার মেয়ের পাগলামি গুলো সহ্য করতে পারবে??

কাব্য : আন্টি আপনি, নীলা সবাই যেহেতু পারেন, আমিও ভালবেসে পারবো। ইনশাআল্লাহ। 

তানিশার মা : ভেবে বলছো তো??

কাব্য : অনেক আগেই ভেবে নিয়েছি। ( মাথা নিচু করে ) 

--- তানিশার মা এগিয়ে গিয়ে কাব্যর মায়ের হাত ধরে বললেন,,,

তানিশার মা : আপা কাব্যর বিষয়টা আমি জানিনা। তবে নীলা যেখানে আছে, তানিশা সেখানে নির্দ্বিধায় সুখী হবে। এটা আমার বিশ্বাস। আর আমি জানি যে,,

--- তানিশার মা ওনার কথা শেষ করার আগেই তানিশা বলে উঠলো,,,

তানিশা : মা তুমি একদম টেনশন করোনা, দেখবা আমি নীলার সাথে অনেক সুখী হবো। ( অনেক খুশি হয়ে ) 

--- কথাটা শুনে তানিশার মা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকে বলল,,,

তানিশার মা : বিয়েটা কি তুই কাব্যকে করবি? নাকি নীলাকে?

তানিশা : কাব্য ভাইয়াকে। ( মাথা নিচু করে )

তানিশার মা : তাহলে নীলার সাথে সুখী হওয়ার মানে কি?

তানিশা : মানে,, নীলা আমার ননদিনী হবে। আর বিয়ের পর ভাইয়া তো সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবেনা। আমি সারাক্ষণ নীলার সাথে থাকবো। তারমানে আমি নীলার সাথেই সুখী হবো। তাইনা?? 

--- তানিশার মা বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে কি কখনো মানুষ হবে? নাকি হবেনা? তানিশার মা কাব্যর মাকে আবারও বলতে লাগলো,,,

তানিশার মা : আপা আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনি বিয়ের আয়োজন শুধু করেন। তানিশার বাবা বিয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে চায়।

কাব্যর মা : আমিও তাড়াতাড়ি করতে চাই। কাব্য তানিশার বিয়েটা শেষ করেই, ভালো পাত্র দেখে নীলাকেও বিয়ে দিয়ে দিবো। 

--- তানিশা আর নীলা একে অপরের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্যকে বিয়ে করে কি হবে যদি নীলাই তার সাথে না থাকে। তানিশার চেহারা দেখে কাব্যর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। বেচারি তানিশা কাব্যকে বিয়ে করে নীলার সাথে থাকতে চেয়েছে। অথচ নীলাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করার জন্যই তানিশাকে বৌ করে নিয়ে যাচ্ছে কাব্যর মা।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে, তানিশার মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে কাব্য কল দিয়েছে। অনেকটা বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া এতো রাতে কল দিছেন কেন?

কাব্য : তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তাই।

তানিশা : এতো রাতে কি কথা বলবেন? 

কাব্য : তোমার সাথে কথা বলবো বলে, সেই কবে থেকে হৃদয়ে অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি।

তানিশা : ওহহ,, আচ্ছা ভাইয়া আপনার কথা অন্য একদিন সময় নিয়ে শুনবো। আমার এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে। 

কাব্য : ঘুমানোর জন্য তোমার এতো তাড়া কিসের?

তানিশা : তাড়াতাড়ি ঘুমালে শরীর ঠিক থাকে, মাথাও ঠান্ডা থাকে। তাই আমি প্রতি দিন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরি। এই জন্য আমার মাথা সবসময় ঠান্ডা থাকে। আর আমি কথাও কম বলি।

--- তানিশার কথা শুনে কাব্যর অনেক হাসি পাচ্ছে। কাব্য নিজের হাসি চেপে রেখে বলল,,,

কাব্য : তুমি কথা কম বলো? কই আগে জানতাম না,,তো 

তানিশা : এখন তো জেনে গেছেন, তাহলে নিজেও ঘুমিয়ে পরেন, আমাকেও ঘুমাতে দেন।

কাব্য : ঘুমাবো তার আগে একটা কথা জানার ছিল?

তানিশা : কি কথা? ( বিরক্ত নিয়ে ) 

কাব্য : ভালবাসো আমাকে? ( অনেক আশা নিয়ে ) 

তানিশা : ভাইয়া আপনাকে ভালবাসতে যাবো কোন দুঃখে??

কাব্য : তাহলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে কেন? ( নিরাশ হয়ে ) 

তানিশা : ঐ মুখ পুরা আবিরকে যেন বিয়ে করতে না হয়। বেটা গরিলা আস্ত একটা লুচুর হাড্ডি আমাকে বলেছে আপনার সাথে বিয়ের পরে যেন কোনো যোগাযোগ না রাখি। ভাইয়া এটা কি কখনো সম্ভব বলেন?? তাই আপনাকে বিয়ে করে ঐ মুখ পুরা হনুমান, ঠোঁট পুরা বানরকে দেখিয়ে দিবো, আপনাকে ছাড়া আমার চলেই না। আর আপনি তো আমাকে ভালবাসেন। তাহলে আপনাকে বিয়ে না করে কি ঐ ডাইনোসরটাকে কেন করবো? যদিও আমি আপনাকে ভালবাসি না। তাতে কোনো সমস্যা নাই, বিয়ের পরেও বাসতে পারবো। তাইনা ভাইয়া??

--- তানিশার কথা গুলো কাব্যর কাছে শুনতে ভালো লাগলেও, বারবার ভাইয়া ডাকটা তার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। কাব্য কিছুটা রাগী গলায় বলল,,,

কাব্য : সেই কখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া করছো কেন? 

তানিশা : তাহলে কি করবো?

কাব্য : কিছু করতে হবেনা। ( বিরক্ত নিয়ে )

তানিশা : তাহলে আমি কি ঘুমিয়ে পরবো?

কাব্য : না, ঘুমাবে কেন? ভালোই তো লাগছে কথা বলতে। আরও কিছুক্ষণ গল্প করি তারপর ঘুমাবা।

--- কাব্য কল কাটছেই না, সেই কখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছে। তানিশা প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে তার উপর। ইচ্ছে করছে একটা লাঠি নিয়ে গন্ডারটার মাথায় ঠাস ঠাস করে কয়েকটা বারি দিয়ে তাকে বেহুশ করে দিতে। গন্ডারটা বেহুশ হয়ে গেলে তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইচ্ছে মতো ফ্লোরে কিছুক্ষণ ঠুস ঠাস করে কয়েকটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে। তারপর নিজের মোবাইলটা সযত্নে বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরতে।
.
এভাবেই প্রতি রাতে কথা বলতে বলতে, কাব্য এখন তানিশার অভ্যাস হয়ে গেছে। আগের মতো কাব্যর প্রতি তানিশা আর বিরক্ত হয়না। কাব্যর মুখ থেকে প্রতিদিন ভালবাসি কথাটা শুনতে ভাললাগে তার। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে কাব্যর সাথে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে। কাব্যর সাথে কথা না বললে এখন তার ঘুমই আসেনা। কাব্যর জন্য তানিশার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। এই অদ্ভুত অনুভূতি কি কাব্যর প্রতি ভাললাগা? নাকি ভালবাসা?? সেটা তানিশা নিজেই জানে না।
.
দেখতে দেখতে বেশকিছু দিনের মধ্যে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কাব্য অনেক খুশি, ফাইনালি তানিশাকে নিজের করে পেয়ে গেছে। বাসরঘরে দরজা খোলে দেখে তানিশা মুখ গোমরা করে বিছানায় বসে আছে। কাব্য রুমে ঢুকে পরনের শেরওয়ানিটা চেঞ্জ করে তানিশার পাশে এসে বসে পরলো। তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,,,

কাব্য : মন খারাপ?

তানিশা : হুম ( মাথা নাড়িয়ে )

কাব্য : প্রিয় জনদের ছেড়ে আসলে একটুআধটু মন খারাপ সবারই হয়। যাইহোক,, বৌ সাজে কিন্তু তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। একদম অপ্সরীদের মতো। ( মুগ্ধ হয়ে ) 

তানিশা : সত্যি ভাইয়া?? ( অনেক খুশি হয়ে )

--- তানিশার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনার সাথে সাথে কাব্যর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। বাসররাতে বরকে কেউ ভাই ডাকে নাকি? এটা শুধু তানিশার ধারাই সম্ভব। কাব্য রেগে গিয়ে বলল,,,

কাব্য : তানিশা please... তোমাকে কতবার বলবো? আমাকে ভাইয়া ডাকবা না। 

তানিশা : ভুলে গেছি। ( করুণ গলায় ) 

কাব্য : কবে মনে থাকবে তো এই কথাটা? আদৌ কি তোমার কখনো মনে থাকবে? নাকি সারাজীবন আমি তোমার ভাইয়া হয়েই থেকে যাবো?

--- কাব্য ধমক দিয়ে কথা বলতেই, তানিশা মন খারাপ করে কাব্যর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে, চোখদুটি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলো। কাব্য তানিশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে, ম্যাডাম রেগে গেছে এখন তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। কাব্য তানিশার সামনে দাড়িয়ে ডাকতে লাগলো,,,

কাব্য : তানিশা উঠো,,

--- তানিশা চোখদুটি খোলে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছেনা। কাব্য আবারও বলল,,,

কাব্য : কি হলো? উঠো,,

তানিশা : না, আমি ঘুমাবো। ( মুখ গোমরা করে )

কাব্য : আমি তোমাকে উঠতে বলছি,,

--- বলেই কাব্য তানিশার হাত ধরে টেনে তুলে নিজেও তার পাশে বসে পরলো। অনেক গুলো লাল কাঁচের চুড়ি তানিশার সামনে এগিয়ে দিয়ে কাব্য মুচকি হেসে বলল,,,

কাব্য : তোমার জন্য।

--- কাঁচের চুড়ি গুলো দেখেই তানিশার মনটা অনেক খুশি হয়ে গেলো। কাঁচের চুড়ি তানিশার কাছে একটু বেশিই ভাললাগে। কাব্য একটা একটা করে নিজেই তানিশার দুহাতে চুড়ি গুলো পরিয়ে দিতে লাগলো। তানিশা তার দুহাতের চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল,,,

তানিশা : চুড়ি গুলো অনেক সুন্দর।

--- কাব্য নিশ্চুপ হয়ে তানিশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অল্পতেই অনেক খুশি হয়ে যায়। তানিশাকে যতো দেখে কাব্যর যেন ততোই তাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে তাকে নিজের বাহুডোরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিতে। কাব্য তার দুহাত দিয়ে তানিশার দুগালে হাত দিয়ে তার কপালে একটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিলো। তানিশা কিছু বলল না, তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
.
ভালই যাচ্ছে তাদের সংসার। ইতিমধ্যে তানিশাও ভালবাসতে শুরু করেছে কাব্যকে। একদিন বিকেলে কাব্য অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখে তানিশা রুমে বসে কান্না করছে। কাব্য কিছুটা অবাক হয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

কাব্য : কি হলো? তুমি কান্না করছো কেন??

--- তানিশা কাব্যর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,,,

তানিশা : নীলাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।

কাব্য : তো এখানে কান্নার কি আছে?

তানিশা : নীলার বিয়ে হয়ে গেলে আমি কার সাথে থাকবো?

--- কথাটা শুনার সাথে সাথে কাব্য হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কার সাথে থাকবে মানে কি? কাব্য কি মরে গেছে নাকি তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে? কাব্য চুপ করে তাকিয়ে আছে, এই মুহূর্তে কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা তার। তানিশা আবারও বলতে লাগলো,,, 

তানিশা : আপনি তো সারাক্ষণ অফিসে থাকেন। নীলার বিয়ে হয়ে গেলে আমি কার সাথে থাকবো? বলেন?

কাব্য : একটা কাজ করা যায়, আমি নাহয় আরেকটা বিয়ে করে নিবো। হয় তুমি আমার নতুন বৌয়ের সাথে থাকবা, নাহয় আমাকে ডিবোর্স দিয়ে নীলার শশুড় বাড়ি চলে যাবা। ঠিক আছে?? ( দাঁতে দাঁত চেপে ) 

--- তানিশা কান্না বন্ধ করে কাব্যর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্য এটা কি বললো? আবার বিয়ে করবে মানে কি? নাকি কাব্য তাকে আগের মতো আর ভালবাসে না? পরক্ষনে তানিশা আবারও কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,,,

তানিশা : আপনি এখন আর আমাকে ভালবাসেন না?

কাব্য : কে বলল? ( ভ্রু কুচকে )

তানিশা : আপনি এখন বলছেন।

কাব্য : আমি আবার কখন বললাম? ( হা হয়ে )

তানিশা : আপনি এখন বলছেন। আমাকে ডিবোর্স দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিবেন। আর আমি যেন নীলার শশুড় বাড়ি চলে যাই।

কাব্য : তুমি তো নীলাকে ভালবাসো, আমাকে না। তাহলে তুমি বরং নীলার সাথেই থাকো। আমার সাথে থেকে কি করবে??

তানিশা : কে বল?ল আমি আপনাকে ভালবাসি না? আমি নীলার থেকেও বেশি আপনাকে ভালবাসি। ( করুণ দৃষ্টিতে )

কাব্য : সত্যি?

তানিশা : তিন সত্যি।

কাব্য : আর কখনো নীলার কথা বলবা? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ) 

তানিশা : না। ( মাথা নাড়িয়ে ) শাঁকচুন্নিটার বিয়ে হয়ে যাক এটাই ভালো হবে। ( নাক টেনে ) 

--- কাব্য তানিশাকে কাছে টেনে নিয়ে তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,,

কাব্য : কান্না করে তো নাকের পানি চোখের পানি সব একাকার করে ফেলেছো।

তানিশা : কেন কান্না করবো না? আপনি তো আমাকে ছেড়ে থাকার পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন। সত্যি করে বলেন তো? আপনি কি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন?

কাব্য : কখনোই না। তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি তো তাই।

--- কাব্য একগাল হেসে তানিশাকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরলো। তানিশার মাঝে কাব্য যেন নিজের অস্তিত্বর এক #অদ্ভুত_পূর্ণতা খোঁজে পায়। 


( সমাপ্ত ) 

আমরা আশা করি, এই গল্পটি আপনার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আপনারা কেমন লাগল এই গল্পটি? আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়া করে মন্তব্যে জানান এবং আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন।


আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


Post a Comment

Previous Post Next Post