গল্পঃ - অদ্ভুত পূর্ণতা
#part - 2 ( বিঃদ্রঃ পার্ট 1 লিংক )
--- নীলা আর তানিশা সামনে তাকিয়ে দেখে তারা সত্যি মেলায় চলে এসেছে। ঝগড়া করতে করতে কখন যে মেলায় চলে এসেছে সেদিকে খেয়াল করেনি। গাড়ি থেকে নেমে দুজনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য গাড়ি পার্ক করে তাদেরকে নিয়ে ভিতরে চলে এসেছে। নীলা তানিশা যে যার মতো করে জিনিসপত্র কিনছে আর কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে,,,
তানিশা : চুড়ি গুলো খুব সুন্দর তাইনা?
নীলা : হ্যা,, আর কত চুড়ি কিনবি?
তানিশা : ভাললাগার জিনিশ গুলো সবসময় নিয়ে নিতে হয়। সবকিছু সবার জন্য প্রযোজ্য থাকেনা। নয়তো অন্য কেউ এসে নিয়ে চলে যাবে। তখন হাজার চেষ্টা করেও ভাললাগার জিনিশ গুলো নিজের করতে পারবো না। তাই সময় থাকতে নিজের জিনিশটা নিজের করে নেয়াই ভালো। ( চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে )
নীলা : হয়েছে,, এতো উপদেশ দিতে হবেনা।
তানিশা : উপদেশ দিলাম কই?
নীলা : উপদেশ দাওনি? ও আচ্ছা তুমি তো ভাষণ দিচ্ছো তাইনা? হুহ,, ( মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে )
তানিশা : চুপ, একদম চুপ থাকবি শাঁকচুন্নি কোথাকার। আচ্ছা ভাইয়া আমি কি কিছু ভুল বলছি? ( কাব্যর দিকে তাকিয়ে )
কাব্য : না, তবে সেটা যদি ভাললাগার মানুষের ক্ষেত্রে হয় তখন?
তানিশা : ভাললাগার মানুষটাকে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখবেন।
--- বলেই তানিশা চুড়ি গুলো দাম কারতে লাগলো। কাব্য মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। মাঝেমাঝে তানিশার কিছু কথায় কাব্য সত্যি মুগ্ধ হয়ে যায়। তানিশার হাত থেকে চুড়ি গুলো নিয়ে কাব্য নিজেই বিল মিটিয়ে দিলো। তার মাঝে হঠাৎ করে নীলার ফোনটা বেজে উঠলো। নীলা কল রিসিভ করে ফোনে কথা বলা শেষ হলে, কাব্যকে বলল,,,
নীলা : ভাইয়া আমার একটা important.. কাজ আছে, আমাকে এক্ষণ যেতে হবে।
কাব্য : এখন? কিন্তু তুই তো মেলায় ঘুরতে এসে ছিলি।
নীলা : ভাইয়া আমি নাহয় কালকে আবার আসবো, আজকে যেতে হবে।
তানিশা : কোথায় যাবি তুই?
নীলা : বললাম তো একটা important... কাজ আছে তুই ভাইয়ার সাথে থাক।
তানিশা : কিন্তু,, ( বলতে গিয়ে থেমে গেলো )
নীলা : আচ্ছা বাই।
কাব্য : ওকে।
--- নীলা মেলার বাহিরে চলে এসেছে, ফোনটা হাতে নিয়ে মিটমিট হাসতে হাসতে তার ভাইকে কল করেছে। কাব্যর ফোনে রিংটোন বেজে উঠতেই কিছুটা চিন্তিত হয়ে কল রিসিভ করে বলল,,,
কাব্য : কি হয়েছে নীলা? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
নীলা : ভাইয়া শান্ত হও আমার কিছু হয়নি।
কাব্য : তাহলে?
নীলা : all the best... ভাইয়া সারাদিন ঘুরে ফিরে enjoy করো। তোমার জন্য শুভকামনা রইলো। ( হাসি দিয়ে )
কাব্য : মানে? ( অবাক হয়ে )
নীলা : মানে তোমরা দুজন একান্তে কিছুটা সময় কাটাও। তানিশাকেও তো তোমাকে একটু বুঝতে দাও। দুজনের মাঝে understanding... ভাল হলে তখনি তো সম্পর্কটা সামনে এগিয়ে যাবে।
কাব্য : thanks...
--- কলটা কেটে কাব্য মিটমিট হাসছে আর ভাবছে, নীলার মতো একটা বোন থাকলে পৃথিবীতে আর কি লাগে। কাব্যকে এভাবে হাসতে দেখে তানিশা বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া আপনি হাসছেন কেন?
কাব্য : এমনি। আচ্ছা তুমি যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো, আমাকে কি দেখতে ভাইয়া টাইপের মনে হয়?
তানিশা : না,, তো। আপনাকে দেখতে পুরাই মাদ্রাজি হিরোদের মতো লাগে। যেগুলো ইয়া লম্বা তরোয়াল হাতে নিয়ে কারো মাথা কাটে, কারো হাত, পা কাটে। যারা মারপিট, কোপাকোপি, কাটাকাটি, হানাহনি করা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। আপনাকে ঠিক তাদের মতোই লাগে। ( একগাল হেসে )
--- তানিশার কথা শুনে কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে একবার ভাল করে নিজের দিকে তাকালো। কোনদিকে থেকে তাকে এমন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছেনা। কাব্য অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,
কাব্য : হিরো নাহয় ভিলেন ডাকলেই পারো। ভাইয়া ডাকার কি দরকার??
তানিশা : কারণ আপনি নীলার ভাইয়া।
কাব্য : মনে করো আমি নীলার ভাইয়া না। অন্য কেউ এখন কি বলে ডাকবা? ( ভ্রু কুচকে )
তানিশা : ভাইয়া বলেই ডাকবো।
কাব্য : কেন?
তানিশা : আপনি মনে হয় বললে তো আর সত্যিটা বদলে যাবেনা।
কাব্য : আমি নীলার ভাই, তোমার না। তুমি আমাকে ভাইয়া ডাকবে না।
তানিশা : তো কি বলে ডাকবো?
কাব্য : তুমি আমার নাম ধরে ডাকো।
তানিশা : ভাইয়া নীলার মতো দেখি আপনিও অর্ধেক পাগলা হয়ে গেছেন। বড় ভাইয়াদের দেখছেন কেউ কখনো নাম ধরে ডাকতে? আল্লাহ এতো বড় পাপ কাজ আমি কিভাবে করবো? নাউজুবিল্লা। আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করো। ( চোখদুটি বন্ধ করে )
কাব্য : সমস্যা নেই, তোমার পাপ করার দরকার নেই, তুমি ভাইয়া বলেই ডাকো। বিয়ের পর না ডাকলেই হলো।
তানিশা : মানে?
কাব্য : কিছুনা,, চলো।
--- কথাটা বলেই কাব্য তানিশার হাত ধরে সামনে এগুতে লাগলো,,,
তানিশা : ভাইয়া আমার হাত ছাড়েন।
কাব্য : ছেড়ে দিলে যদি হাড়িয়ে যাও?
তানিশা : আমি ছোট নাকি? যে হারিয়ে যাবো?
কাব্য : সেটা তুমি বুঝবে না, চলো তো।
--- কাব্য তানিশার হাত ধরে মেলায় ঘুরছে, এটা ওটা কিনছে। ভালই কাটছে তানিশার সাথে কাব্যর সময়টা। কখন যে দুপুর হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল করেনি। মেলা থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো অন্য গন্তব্যে। কেমন যেন রাস্তাটা অপরিচিত মনে হচ্ছে তানিশার কাছে। তাই সে কাব্যকে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?
কাব্য : তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। জায়গাটা অনেক সুন্দর।
তানিশা : ভালই হয়েছে, বাসা থেকে তেমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা, মামনি দেয়না।
কাব্য : তুমি চাইলে মাঝেমধ্যে আমার সাথে সপ্তাহে একবার যেকোনো জায়গা ঘুরতে যেতে পারো।
তানিশা : মামনি দিবে না ( মন খারাপ করে )
কাব্য : সমস্যা নেই, বিয়ের পরে ঘুরবা।
তানিশা : বিয়েটা কবে হবে? সেই অপেক্ষা করতে করতে মনে হয় আমি বুড়ি হয়ে যাবো। বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে, অথচ আমার বিয়ে নিয়ে মামনির কোনো টেনশন নেই। ( হতাশ হয়ে )
--- কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। সবেমাত্র এই মেয়ে ১৮ তে পা দিয়েছে আর ও বলছে, ওর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কথাটা শুনে কাব্যর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তবুও নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলল,,,
কাব্য : তোমার পছন্দের কেউ আছে?
তানিশা : না। কেউ propose... করলে আমার আগে নীলাই না করে দেয়।
কাব্য : কেন?
তানিশা : নীলা বলেছে যাকে বিয়ে করবি, তার সাথেই প্রেম করবি। আমারও তো ইচ্ছে করে প্রেম করতে। এখন আমি আমার বজ্জাত বরকে কই পাবো প্রেম করার জন্য?
--- কথাটা বলেই তানিশা মনটা খারাপ করে ফেলল। কাব্য তার দিকে তাকিয়ে কোনোরকম কথাটা হজম করে নিয়ে বলল,,,
কাব্য : ও,, আচ্ছা আমার সাথে time spend... করতে কেমন লাগে তোমার?
তানিশা : অবশ্য আপনার সাথে সময় কাটাতে ভালই লাগে আজকে বুঝলাম। আপনি মানুষ হিসেবে এতটাও খারাপ না। আজকের সময়টা কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
কাব্য : চাইলে সারাজীবন কাটাতে পারো রানী করে রাখবো।
তানিশা : মানে?
কাব্য : তুমি যদি কাউকে এটা বলো, যে তার সাথে সময় কাটাতে তোমার ভাললাগে। সে তার প্রতি উত্তরে তোমাকে এটাই বলবে। আর এটা তো স্বাভাবিক তাইনা??
তানিশা : হয়তো। আচ্ছা ভাইয়া আপনি ঐ মেয়েকে বলে ছিলেন?
কাব্য : এখনো বলিনি ভাবছি খুব জলদি বলবো। আচ্ছা ও যদি আমার proposer expect... না করে তখন কি করবো?
তানিশা : করবেনা মানে, অবশ্যই করবে। প্রয়োজনে ঐ বজ্জাত মেয়ের চুলের মুঠি ধরে টেনে হেঁচকে রাজি করাবেন। তারপরও রাজি না হলে দুগালে থাপ্পড় মেরে মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলবেন। তখন দেখবেন বোধগম্য হারিয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হবেনা কিন্তু মাথা নেড়ে হ্যা বলবে ঠিকি। ও proposer except... করবেনা তো ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি করবে।
কাব্য : যদি কেউ তোমার সাথে এমন করে তুমি কি করবে?
তানিশা : কোন বজ্জাতের হাড্ডি আমার সাথে এমন করবে? যদিও কেউ এমন করে তার নামে সাথে সাথে পুলিশ কেস করবো। ( রাগে গজগজ করে )
কাব্য : সেই সুযোগ পাবেনা।
তানিশা : কেন?
কাব্য : সেটা সময় হলে বুঝবে।
--- কথাটা বলতে বলতে কাব্য গাড়ি থামালো।
--- পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের তাপের তেমন প্রখরতা নেই। বিশাল বড় একটা বট গাছের নিচে রশি দিয়ে বাধা একটা দোলনা ঝুলানো আছে। উপর থেকে এক ঝাঁক পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে। গাছের নিচে চারদিকে ছোট ছোট সবুজ ঘাসের সমারোহ। গাছের পিছনেই সারি সারি হলুদ সরিষা ফুলের ক্ষেত, তার এক পাশে ঘাট বাধানো বড় পুকুর। দূরদূরান্তে কোনো ঘরবাড়ি দেখা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে কয়েকজন ছোট ছোট গ্রামের মেয়েদের খেলতে। সব মিলিয়ে জায়গাটা খোলা আকাশের নিচে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ। জায়গাটা দেখেই তানিশার মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো। খুশিতে দুহাতে তালি বাজিয়ে দৌড়ে গিয়ে দোলনায় বসে পরলো। পা দুটি নাড়িয়ে দোলনায় বসে বলতে লাগলো,,,
তানিশা : ভাইয়া এতো সুন্দর জায়গা আপনি কিভাবে চিনেন?
কাব্য : এটা আমাদের অরণ্যপুর গ্রামের ছোট্ট একটা অংশ বটতলা।
তানিশা : এটা আপনাদের গ্রাম? ( অবাক হয়ে )
কাব্য : হুম ঐযে রাস্তাটা দেখছো ঐদিক দিয়ে আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। হেটে যেতে মাত্র ১০ মিনিট লাগে।
তানিশা : আপনাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর।
--- কথাটা বলেই তানিশা পা দুটি নাড়িয়ে আপন মনে দোলনায় দোলছে, আর চারদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কাব্য পকেটে হাত দিয়ে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে তানিশার দিকে। তানিশার মনটা আজ অনেক ফুরফুরে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে তানিশা বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া একটা কবিতা বলি?
--- সাথে সাথেই কাব্যর মুগ্ধতা ফুস করে হাওয়ায় উড়ে গেছে। তানিশা যে কেমন কবিতা বলবে এটা তার খুব ভাল করে জানা আছে। তার থার্ডক্লাশ কবিতা শুনার জন্য সে এখন মোটেও প্রস্তুত না। কাব্য কবিতা না শুনার জন্য আশেপাশে তাকিয়ে পুকুরের দিকে ইশারা করে বলল,,,
কাব্য : ঐ দেখো দৃশ্যটা কতো সুন্দর। একটা সাদা বক কিভাবে পানিতে মুখ ডুবিয়ে মাছ তুলে খাচ্ছে।
--- তানিশা তাকিয়ে দেখে সত্যি দৃশ্যটা অনেক সুন্দর। দৃশ্যটা দেখার পর তার আরও বেশি কবিতা বলার ইচ্ছে হচ্ছে। কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া কবিতাটা বলি?
কাব্য : বাসায় গিয়ে শুনবো, এখন না। ( পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে )
তানিশা : না ভাইয়া আমি এখনি বলল।
--- কাব্যর ইচ্ছে তানিশাকে দুগালে কষে দুইটা চড় মারতে। এখানে কি সে কবিতা শুনতে এসেছে নাকি? এসেছে তার সাথে একান্তে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে। কিন্তু ফাজিল মেয়েটা যেখানে সেখানে শুরু করে দেয় মানুষের মাথা খারাপ করার মতো তার থার্ডক্লাশ কবিতা। কাব্য শুনতে ইচ্ছুক না, তাই এটা ওটা বাহানা দিয়ে শুনতে চাইছে না। তবুও এই মেয়ে বলেই ছাড়বে। তানিশা আবারও বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া বলবো?
--- কাব্য কোনোরকম মাথাটা ঠান্ডা রেখে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। তানিশা খুশি হয়ে বলতে লাগলো,,,
তানিশা : দেখবেন ভাইয়া কবিতাটা শুনে আপনার মন একদম ভাল হয়ে যাবে।
বড় পুকুরের বড় মাছ,
নাক ডুবিয়ে বক মাছ খাস।
সারি সারি সরিষা চাষ,
তার পাশেই বড় এক বটগাছ।
বটগাছে থাকে ভুতের নানি,
সেই গাছে ঝুলছি সাহসী আমি।
--- বলেই তানিশা একগাল হেসে দোলনা থেকে নেমে কাব্যর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া কবিতাটা কেমন হইছে?
--- কাব্য নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। এমন থার্ডক্লাশ কবিতা বলে দাঁত সব গুলো বের করে হাসি দিয়ে, এতো খুশি হয়ে জিঙ্গাসা করার কি আছে? এটাই বুঝতে পারছেনা কাব্য। ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে তানিশার সামনের সব গুলো দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু এমনটা করা এই মুহূর্তে ঠিক হবেনা। কাব্য অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,
কাব্য : সন্ধা ঘনিয়ে আসছে বাসায় যেতে হবে চলো।
তানিশা : যাবো। আগে বলেন আমার কবিতা কেমন হইছে? অনেক সুন্দর তাইনা?
কাব্য : হ্যা নোবেল পাবার যোগ্য।
--- কথাটা বলেই কাব্য সামনে হাটতে লাগলো। তানিশা তার পিছনে দৌড়ে গিয়ে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া সত্যি? ( খুব খুশি হয়ে )
--- কাব্যর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে তানিশাকে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারতে। একেতো এমন বাজে কবিতা, তার উপর সারাক্ষণ শুধু তাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকা। কাব্য কিছুটা রাগী গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,
কাব্য : আমাকে ভাইয়া ডাকা বন্ধ করো। তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনতে আমি মোটেও ইচ্ছুক না। নাহয় থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত ফেলে দিবো।
--- কাব্যর রাগী চোখ আর কথার ধরন দেখে ভয়ে তানিশার কলিজা শুকিয়ে গেছে। তার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কাব্য হঠাৎ রেগে গেলো কেন? আর ভাইয়া ডাকলে কি সমস্যা? নীলাও তো তাকে ভাইয়া বলেই ডাকে। আগেও তো তানিশা তাকে ভাইয়া ডেকেছে, কই তখন তো এমন রিয়েক্ট করেনি। নাকি সত্যি সত্যি এই বটগাছের নিচে ভুতের নানি আছে? যেটা কাব্যর ঘাড়ে চেপে বসে তানিশাকে মারার প্যান করছে। কাব্যর রাগী চেহারা দেখে তানিশা ভাবছে, এখন যদি কাব্য তাকে বটগাছের নিচে রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে ফেলে। বা পুকুরে ফেলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মেরে মেরে বলে "আর ভাইয়া ডাকবি আমাকে"? যদি গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে, তখন কি হবে? ভাবতেই তানিশার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখন তার নিজের জীবন বাচানোটা বেশি জরুরি। তানিশা কোনো কথা না বলে ভাবছে এখন সে নিজের জীবন কিভাবে বাচাবে? কাব্য আবারও ধমকের দিয়ে বলল,,,
কাব্য : আর ভাইয়া ডাকবা আমাকে?
তানিশা : জীবনেও না। ( মাথা নাড়িয়ে ) এই দেখেন কান ধরছি।
--- কথাটা বলেই তানিশা এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না, দৌড়ে গিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরলো। কাব্য গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে তানিশা পেছনে বসে আছে। যেটা কাব্যর কাছে মোটেও পছন্দ না। কাব্য ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলল,,,
কাব্য : সামনের সিটে এসে বসো। ( স্বাভাবিক ভাবে )
তানিশা : না আমি এখানেই ঠিক আছি। ( ভয়ে ভয়ে )
কাব্য : তোমাকে সামনে এসে বসতে বলছি। ( রাগী গলায় )
--- তানিশা কোনো কথা না বাড়িয়ে সামনের সিটে এসে বসে পরলো। আড়চোখ কাব্যর দিকে তাকিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিয়ে চোখদুটি বন্ধ করে বিড়বিড় করে সব দোয়াদরুদ পড়তে লাগলো। এখন এই নাইজেরিয়ান এনাকন্ডা, আফ্রিকান গন্ডার থেকে নিজের জীবন বাচিয়ে সহিসালামতে তার বাসায় যাওয়া দরকার। কাব্য তানিশার দিকে তাকিয়ে দেখে সে কি যেন বিড়বিড় করছে। কাব্য ভ্রু কুচকে বলল,,,
কাব্য : কি পড়ছো?
--- কথাটা বলতেই তানিশা চমকে উঠে ভয়ে কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
তানিশা : কিছুনা।
কাব্য : কি পড়ছিলে বলো? আমিও শুনি?
তানিশা : আসলে,, আমার আশেপাশে অনেক শয়তানের জম ঘুরাঘুরি করছে তো তাই নিজেকে বাচানোর জন্য দোয়াদরুদ পড়ছিলাম।
কাব্য : তুমি কি আমাকে শয়তান মিন করছো? ( ভ্রু কুচকে )
তানিশা : না। আপনাকে শয়তান বলার কি দরকার? আপনি তো এমনি শয়তানের সর্দার হয়ে বসে আছেন।
--- বলেই নিজের জিহ্বায় কামড় দিলো। এটা সে কি বলে ফেললো? হায় হায়,, এখন যদি ভুতের নানি সত্যি কাব্যর শয়তানী রূপ ধারন করে তাকে মেরে ফেলে? এখন সে কি করবে?? এখন তাকে কথা ঘুরাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। তানিশা কথা ঘুরিয়ে বলল,,,
তানিশা : মানে,, বলছিলাম আমার সাথে এমনিতে সবসময় ১০-১২ টা শয়তান থাকে। আর কেউ যদি আমার সাথে শয়তানী করতে আসে, তার ১২ টা আমি বাজিয়ে দেই।
--- কথা গুলো বলেই তানিশা দোয়াদরুদ পড়ে কাব্যর গায়ে ফু দিতে লাগলো, যেন ভুতের নানি কাব্যর ঘাড় থেকে চলে যায়। কিন্তু যাচ্ছেইনা। কাব্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা গুলো যে সে কাব্যকে বলেছে এটা খুব ভাল করে বুঝতে পারছে। কাব্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানিশা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,,,
তানিশা : আমি বাসায় যাবো।
--- কাব্য তানিশার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজেকে স্থির করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এই মুহূর্তে তার কিছুই বলতে ইচ্ছে করছেনা।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌঁছাতেই তানিশা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে নীলার রুমে গিয়ে নিজের কাপড় গু্লো গুছাতে লাগলো। তানিশা দৌড়ে আসতেই নীলাও তার পিছুপিছু এসে বলল,,,
নীলা : কি হয়েছে এভাবে দৌড়ে আসলি কেন?
তানিশা : তোর ভাই বজ্জাতের হাড্ডি, লাল বাদরের ঘাড়ে ভুতের নানি চেপে বসে আছে। বুঝলি? আমি ভাইয়া ডাকতেই রেগে কটমট করে আমাকে বলে, ভাইয়া বললে থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত নাকি ফেলে দিবে। দাঁত গুলো ফেলে দিলে আমি খাবো কিভাবে? আমি আর এই ভুতুড়ে বাড়িতে থাকবো না। মরলে তোরা মরবি, তাতে আমার কি? আমি এই বাড়ি ছেড়ে এখনি চলে যাবো। ( বলেই নিজের কাপড় গুছাতে লাগলো )
নীলা : তুই যে আধ পাগল এটা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু আজকে যে পুরা পাগল হয়ে গেছিস এটা এখন জানলাম। ( হাসতে হাসতে )
তানিশা : কি বললি শাঁকচুন্নি আমি আধ পাগল? শেওড়া গাছের সাদা পেত্নী তুই তাহলে পুরা পাগল। ( রেগে )
নীলা : আমাকে একদম পাগল বলবি না।
তানিশা : তো কি বলবো ছাগল? চোখ থাকা কানি তুই আমার সাথে আর কোনোদিন কথা বলবিনা। ( মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে )
নীলা : তুই আমার সাথে কথা না বললে তোর চুল গুলো আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। ( রেগে )
তানিশা : আর আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো ভেবেছিস??
কাব্য : তোমাদের ঝগড়া শেষ হয়েছে? নাকি এখনো বাকি আছে?
--- কাব্যর মা রাতের খাবার রেডি করে নীলা আর তানিশাকে ডাকার জন্য কাব্যকে পাঠিয়েছে। কাব্য গিয়ে দেখে তারা প্রতিদিনের মতো আজকেও ঝগড়া করছে। কাব্যকে দেখে তানিশা হাসি দিয়ে বলল,,,
তানিশা : ভাইয়া আমরা ঝগড়া করছিনা তো।
কাব্য : বুঝেছি,, তোমরা দুষ্টামি করছিলে। এখন খাবার খেতে চলো।
--- কাব্য চলে যেতেই নীলা আর তানিশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। তানিশা খাবারের টেবিলে বসে কাব্যকে লক্ষ করছে। কাব্যর মধ্যে কি এখনো ভুতের নানি আছে? নাকি চলে গেছে? হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে চলে গেছে। কাব্যর দিকে তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভ্রু দুটি নাচিয়ে ইশারায় জিঙ্গেসা করলো কি হয়েছে। তানিশা মাথা নাড়িয়ে না করে ভাবছে, কাব্যর একটা উপকার করা দরকার। হাজার হোক নীলার ভাই। বেচারা একটা মেয়েকে পছন্দ করে, নিজে তো ভয়ে কিছুই করেনা। আন্টিকে বললে হয়তো ওনার কোনো সহযোগিতা করবে। তানিশা কাব্যর মাকে বলতে লাগলো,,,
তানিশা : আন্টি একটা কথা বলি?
কাব্যর মা : তুই আবার কবে থেকে অনুমিত নিতে শুরু করলি?
তানিশা : এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার যদি কিছু মনে করেন তাই আরকি।
কাব্যর মা : আচ্ছা বল? কি বলবি?
তানিশা : আন্টি কাব্য ভাইয়া তো বুড়া হয়ে যাচ্ছে। ওনাকে ভাল একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দেন। অবশ্য আমার কাছে অনেক ভাল একটা পাত্রী আছে।
--- কথাটা শুনার সাথে সাথে সবাই কাব্যর দিকে তাকালো। কাব্যর হাতে থাকা লোকমাটা পরে গেছে। সে তানিশার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের দিকে ভালভাবে তাকাচ্ছে দেখছে কোন দিক থেকে তাকে বুড়া মনে হচ্ছে? আর তানিশা পাত্রী কই পেয়েছে? সব জায়গায় শুধু গন্ডগোল বাধানো ছাড়া এই মেয়ের আর কোনো কাজ নেই, নাকি?? কাব্য ভ্রু কুচকে জিঙ্গাসা করলো,,,
Next part: part 3 link
আমরা আশা করি, এই গল্পটি আপনার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আপনারা কেমন লাগল এই গল্পটি? আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়া করে মন্তব্যে জানান এবং আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন।
আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Post a Comment