গল্পঃ - বেস্ট ফ্রেন্ড এর বোন যখন গার্লফ্রেন্ড
#পার্ট -1
–জান্নাত আজ আমাদের রিলেশনের এক মাস হয়ে গেল অথচ তুমি আমাকে এখন পর্যন্ত তোমার একটা ছবি দিলা না। প্লিজ আজকে একটা ছবি দাও তোমার 🙏
–তোমাকে বলছি না এসব ছবির আবদার করবে না। যদি দেখার শখ থাকে তাহলে আমাদের বাড়িতে এসে দেখে যাও।
–এটা কেমন কথা তুমি বলো? এখন কি আমি যেতে পারবো? তুমি বোঝার চেষ্টা করো না কেন? একটা ছবি দিলে কি হবে?
–তোমাকে বলছি না যদি দেখতে চাও তাহলে আমার বাড়িতে আসো। আমার এসব জোরাজুরি ভালো লাগেনা।
–তোমার বাড়িতে কিভাবে যাব?
–আমি কিছু জানিনা..
–আচ্ছা তোমার জানতে হবে না। দেখি যেদিন যেতে পারব সেদিনই তোমাকে দেখবো।
–এইতো ছেলের মত কথা।
–হইছে আর বলতে হবে না।।
–ঠিক আছে বললাম না...
–ওই বাবু এখন বাই মা আসছে পরে কথা হবে।
তাই বলে ফোনটা রেখে চলে গেল। এখন আসেন আমাদের পরিচয়টা জেনে নিন> আমি হৃদয় এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর যে মেয়েটির সাথে কথা বললাম তার নাম জান্নাত। আমি ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করি আর জান্নাত এর বাড়ি সিরাজগঞ্জ। জান্নাত এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমাদের প্রথম পরিচয় ফেসবুকে। আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায় কিন্তু কখন যে আমি অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলি আমি নিজেও জানিনা। তাকে কোনদিন দেখি নাই কিন্তু আমার মনের ঘরে তাকে নিয়ে একটি স্বপ্ন বেঁধেছি। ওর কাছে যতদিন ছবি চাইছি ততদিন আমাকে নিষেধ করছে। আপনারা দেখলেন তো এখন কি বলল?
–হৃদয় একটু এদিক আয়তো (মা)
পরিচয়টা তো দিয়ে দিলাম এখন মা ডাকছে বাকিটা আপনারা পড়ে নিন......
–হ্যা মা বলো কি হয়েছে?
–ঘরটা এমন অবহেলা করে রেখেছিস কেন? নিজের ঘরটা গুছিয়ে রাখতে পারিস না?
–ওহো মা! তুমি জানো আমি একটু অগোছালো তবুও প্রতিদিন একই কথা কেন বল?
–দুদিন পরে বউ যখন ঘরে আসবে তখন কি করবি হ্যাঁ?
–মা তুমি যে কি বল না? তখন তো তোমার বৌমাই এসব করবে..
–হুম হইছে আর বলতে হবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে আয় নাস্তা রেডি আছে খেয়ে ভার্সিটিতে যা..
–ঠিক আছে মা।
তারপর আমি রেডি হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে যাই। ভার্সিটিতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে ইব্রাহিম। সেই ইন্টার থেকে আমরা দুজনে একসাথে লেখাপড়া করছি। দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। কখনো আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়না.. ভার্সিটিতে যেতেই দেখলাম ইব্রাহিম বট গাছের নিচে বসে আছে..
–কিরে কখন আসলি?
–এইতো দোস্ত 5 মিনিট হলো। আজ দেখছি তোর মন খারাপ ব্যাপার কি? কিছু হয়েছে নাকি?
–আরে নারে দোস্ত কিছু হয়নি। তো তুই একা বসে কেন আর সবাই আসেনি?
–হুম সবাই এসেছে। সবাই যে যার ক্লাসে চলে গেছে, আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি এখানে।
–তো তুই তোর ক্লাসটা মিস করলি?
–আরেকদিন ক্লাস না করলে কিছু হয় না..
–পরে ক্লাস কয়টায়?
– ১০.৪০ এ....
–আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ততক্ষণ একটু আড্ডা দেই।
–হ্যাঁ তাইতো বলবি। মহারাজ দেরি করে আসবেন আর ক্লাস মিস করে আড্ডা দিতে হবে।
–দোস্ত কাল থেকে আর লেট হবে না প্রমিস।
–তুই তো প্রতিদিনই প্রমিস করিস। একদিকে কি তা রাখতে পারছিস?
–সরি দোস্ত আর হবেনা।
–ঠিক আছে।
তারপর বসে দুজনের আড্ডা দেই। ১০.২০ এ সবার ক্লাস শেষ হয় আর সবাই বটগাছ তলা চলে আসে। তারপর সবাই মিলে আড্ডা দেই..
–এই সুমন তোর বাবা কি অবস্থা এখন? (সুমনের বাবা হার্টের রোগী। হাসপাতালে ভর্তি আছে, সুমনের কোন বড় ভাই নেই তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে আর বাবা-মা কে দেখাশোনা করে। যার কারণে আমরা সবাই সুমনকে একটু বেশি ভালোবাসি)
–ঐ আগের মতোই রে(সুমন)
–আচ্ছা ডাক্তার কি বলছে? (হৃদয়)
–ডাক্তার বলছে সময় লাগবে কিন্তু নিশ্চয়তা নেই...(সুমন)
–মন খারাপ করিস না দোস্ত সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে (হৃদয়)
–দোয়া করিস দোস্ত (সুমন)
–আমরা তো সব সময় দোয়া করি। তোর মা-বাবাকে আমাদের মা-বাবা নয়? (হৃদয়)
–হ্যাঁ অবশ্যই (সুমন)
–তাহলে এমন কথা বললি কেন? (হৃদয়)
–সরি দোস্ত ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না (সুমন)
–হুম ঠিক আছে। আচ্ছা মিলি আজকে মেকআপ করিস নাই নাকি? (হৃদয়)
–তুই আবার আমার মেকআপ নিয়ে কথা বলছিস (মিলি)
–আছে হৃদয় তোর মিলি পিছে না লাগলে কি পেটের ভাত হজম হয় না নাকি? (ইব্রাহিম)
–একদম ঠিক বলছিস। শালা সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে (মিলি)
–হইছে এখন সাপোর্ট পাইয়া এত লাফালাফি করতে হবে না। তুমি যে মেকআপ ম্যান তা তো সবাই জানে। সারাক্ষণ মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত হি. হি. হি.(হৃদয়)
–এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে হৃদয় (মিলি অনেক রাগ হয়ে বলল)
–আচ্ছা বইন ভুল হইছে মাফ কইরা দে (হৃদয়)
–হইছে এত ঢং করতে হবেনা (মিলি)
–বাবা না চাইলেও দোষ। আচ্ছা ঠিক আছে আজকের পর আর কোনদিন তোর কাছে মাফ চাইবো না (হৃদয়)
–আচ্ছা তোরা কি শুরু করলে বলতো? (ইব্রাহিম)
–আছে সবকিছু বাদ দে তো দোস্ত। খুব ক্ষুধা পাইছে চল ক্যান্টিনে যাই (সুমন)
–তোর খোদা লাগছে তুই মিলিয়ে নিয়ে যা। আমাদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে আমি আর ইব্রাহিম ক্লাসে গেলাম।(হৃদয়)
–এখন তোদের আবার ক্লাস আছে?(সুমন)
–ক্লাস না থাকলে কি আমি যাই?(হৃদয়)
–সবই বুঝি! না খাওয়ানোর ধান্দা শুধু (মিলি)
–ওই কি বললি তুই? তোদের আমি খাওয়াই না? প্রতিদিন যে ক্যান্টিনে বসে এটা ওটা খাস কি খাওয়ায়? (হৃদয়)
–আহা করত হৃদয়(ইব্রাহিম)
–আচ্ছা ঠিক আছে।তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে বস আমরা ক্লাস করে আসছি তারপর একসাথে খাওয়া দাওয়া করব। আর তোদের যদি দেরি না পছন্দ হয় তাহলে খেয়ে নিতে পারিস আমি এসে বিল দেবো সমস্যা নাই। (হৃদয়)
–সত্যি দিবি তো?(মিলি)
–হ্যাঁ দেব এখন যা তোরা.....
তাই বলে ওদেরকে রেখে আমি আর ইব্রাহিম ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে ঢুকতে দেখি নতুন একটা স্যার জয়েন করছে আজকে তার ক্লাস। স্যারের আজ আমাদের প্রথম ক্লাস তাই আজকে পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে ক্লাস শেষ করে। ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি হারামিগুলা বসে আছে।
–কিরে তোরে কিছু খাস নি?(ইব্রাহিম)
–তোদের ছাড়া আমরা কখনো কিছু খাইছি? (সুমন)
–আরে বোকা খাইলে কি হইত?(হৃদয়)
–কিছু হতো না কিন্তু তোদের ছাড়া আমরা খাব না তাই খাইনি। (মিলি)
–আচ্ছা খাস নি ভালো করছোস। তো এখন কি খাবি বল?(হৃদয়)
–এখন বেশি কিছু খাবো না হালকা নাস্তা করলে হবে। (মিলি)
–আচ্ছা তাহলে সিংগারা আনি তোরা বোস।
তাই বলে আমি সিংগার আনতে সিংগারার গেলাম সাথে কোলড্রিংক নিলাম। তারপর সবাই নাস্তা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে লাঞ্চ করে বিকালে একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে দেখি মোবাইলে 29 টা মিসড কল। চেক করে দেখি জান্নাতের কল ছিল। আজ আমি শেষ.. কি মরণের ঘুমাচ্ছিলাম ফোনটা বাজছিল বুঝতে পারিনি। জান্নাত তো আজকে আমাকে মেরে ফেলবে... তাড়াতাড়ি করে জান্নাত কে একটা ফোন করলাম..
–হ্যালো জান্নাত!
–সরি কে আপনি? আর কাকে ফোন?
–আমি জান্নাত সরি। আসলে ভার্সিটি থেকে এসে লাঞ্চ করে একটু ঘুমিয়ে পড়ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি কখন ফোন করছিলা। সরি 🙏🙏
–তো ঘুম থেকে উঠছেন কেন? জান ঘুমান...
–সরি তো জান।
–তোমার এই সরি আমার আর ভালো লাগেনা।
–আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ছিলাম তো কি করব?
–কিছু করতে হবে না চুপচাপ বসে থাকো বাই....
তাই বলে ফোনটা কেটে দিলো..(আল্লাহ গো মেয়েটা কত রাগ করে। আল্লাহ তুমি মেয়েটাকে একটু হেদায়েত দান করো। কথায় কথায় রাগ করে।) ফোনটা কেটে যাওয়ার সাথে আবার ফোন করলাম...
–কি ব্যাপার আবার ফোন করছ কেন?
–আমার জান পাখিটা.. প্লিজ কথা বলো...
–তোমার সাথে আবার কিসের কথা?
–কথার কি শেষ আছে?
–হ্যাঁ কথা শেষ আছে। তোমার সাথে আমার আর কোন কথা নেই।
–প্লিজ জান এমনটা করোনা। প্লিজ কথা বলো..
–আচ্ছা ঠিক আছে বল কি বলবে?
–আই লাভ ইউ।
–এটা ছাড়া আর কোন কথা আছে?
–আছে তো!
–তো সেই কথা বলো।
–আমার না খুব ইচ্ছা করছে তোমার কাছে ছুটে যেতে...
–তো আসো না কেন?
–কি করব বলো সিরাজগঞ্জ তো আমার কোন রিলেটিভ নেই যে তার পাশেই যাব।
–রিলেটিভ না থাকলে কি আসা যায় না?
–যাওয়া যায় তো কিন্তু আমি তো কিছুই চিনি না কোথায় যেতে কোথায় চলে যাব।
–হা হা হা.. তুমি কোন দুনিয়ার মানুষ হুম?
–কেন?
–তুমি ডিজিটাল যুগে এসে হারিয়ে যাওয়ার ভয় করছ?
–আমি আমার ভয় করিনা। যদি তুমি কোন কারণে হারিয়ে যাও সেদিন আমার মরন ছাড়া কিছু হবে না।
–হুম হইছে এখন আর ইমোশনাল হতে হবে না..
–হুম।
তারপর জান্নাতের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে একটু ছাদে যাই। আমাদের ছাদে একটি দোলনা আছে তো ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিলাম এমন সময় সুমনের ফোন আসলো....
–হ্যালো হৃদয় তুই কোথায়? (অনেকটা আতঙ্কিত কন্ঠে বলল)
আমাদের ছাদে একটি দোলনা আছে তো ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিলাম এমন সময় সুমনের ফোন আসলো....
–হ্যালো হৃদয় তুই কোথায়? (অনেকটা আতঙ্কিত কন্ঠে বলল)
–কিরে কি হইছে? এভাবে কথা বলছিস কেন?
–বাবা কেমন জানি করছে তুই একটু তাড়াতাড়ি হাসপাতলে আসবি? (অনেক ভয়ের স্বরে বলল)
–আচ্ছা আমি আসতেছি দাড়া।
তাই বলে ফোনটা রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে ইব্রাহিমের বাসায় গেলাম। ইব্রাহিম কে সাথে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সুমন একটা বেঞ্চের উপর বসে আছে। আমি কি সুমনকে বললাম...
–কি হয়েছে সুমন?
–বাবার আবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে...(কান্না করছে)
–কি বলিস? এখন আঙ্কেল কই?
–ডাক্তার অপারেশন করছে।
–আচ্ছা তুই কোন চিন্তা করিস না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
–তোরা তো জানিস আমি বাবার জন্য কত কিছু করছি। বাবার এমন হলে আমি আর মা থাকবো কিভাবে?
–আরে কিছু হবে না আঙ্কেলের...
আমি সুমনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম। সান্ত্বনা দিতে দিতে দেখি ডাক্তার অপারেশন শেষে বাহিরে আসলো। আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম..
–কি অবস্থা ডাক্তার? (সুমন)
–অবস্থা খুব একটা ভাল না। রোগী চাইছে না বাঁচতে আমরা কি করবো বলেন? (ডাক্তার)
–মানে! কি বলছেন আপনি? (আমি)
–উনি হার্টের পেশেন্ট কিন্তু সেদিকে তিনি কোনো চিন্তাই করেন না। সারাক্ষণ নিজের প্রতি অবহেলা করে। এখন আমরা কি করব?(ডাক্তার)
–আচ্ছা ডাক্তার এখন কোন উপায় নেই কি?(আমি)
–হ্যাঁ আছে। অনেকে মেন্টালি সাপোর্ট দিতে হবে।(ডাক্তার)
–আচ্ছা ঠিক আছে ডাক্তার আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করব (আমি)
–ঠিক আছে (ডাক্তার)
তারপর ডাক্তার চলে যায় আমরা সুমনের বাবার কাছে যাই। সুমনের বাবার কাছে গিয়ে বলি...
–আঙ্কেল এখন কি অবস্থা?(আমি)
–এইতো বাবা জীবন্ত লাশ হয়ে শুয়ে আছি।
–এমন কথা বলছেন কেন? (ইব্রাহিম)
–কি বলবো বাবা? আর কতদিন এভাবে থাকবো? অনেক দিন তো হয়ে গেল...
–হ্যাঁ অনেকদিন হয়ে গেল। আপনি জানেন আপনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সুমন আর আন্টি কত কষ্ট করছে? যেখানেই সুমনের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কথা সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি আপনার চিকিৎসা খরচ যোগাতে হয় পরিবার চালাতে হয়। এই বয়সে সুমনকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে বলেন?আর আপনি যদি নিজেকে এভাবে গুটিয়ে নেন তাহলে কিভাবে হবে? আপনার ছেলের দিকেও তো দেখতে হবে নাকি? আপনার ছেলে দুঃখটা কি একটু বোঝার চেষ্টা করবেন না? একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন সবাইকে ভালো রাখতে হবে তো। (আমি)
–ঠিক বলছো বাবা। আমি একটা অপদার্থ বাবা। যেখানে আমি বাবাকে সব দায়িত্ব পালন করতে হবে সেখানে আমার ছেলে আমার দায়িত্ব পালন করছে।
–তাহলে বুঝেন। এখন আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। আর কোন চিন্তা করবেন না। আমরা আছি তো, সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবেন। (আমি)
–ঠিক আছে বাবা। তোমাদের অনেক কষ্ট দিলাম (সুমনের মায়ের হাত ধরে বলল)
–আমাদের কোন কষ্ট নেই তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো (সুমনের মা)
–আমাকে সুস্থ হতেই হবে।
–এইতো আঙ্কেল এখন বুঝতে পারছেন (ইব্রাহিম)
তারপর কিছুক্ষণ আঙ্কেলের সাথে কথা বলার পর সুমনকে বুঝিয়ে রেখে আমি আর ইব্রাহিম চলে আসি। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে একটু আড্ডা দিতে বেরিয়ে পড়ি। আজ ভার্সিটিতে ক্লাস নেই তাই ভার্সিটিতে যাওয়া হলো না। আমাদের একটা আড্ডা খানা আছে সেখানে যেদিন ভার্সিটি কোন থাকে সবাই সে আড্ডা দেই। আজকেও তার বিকল্প নেই। সবাই এসে পড়েছে। সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ এমন সময় ইব্রাহিমের ফোনে একটা কল আসে...
–ইব্রাহিম! তোমার ছোট চাচার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামীকাল আমাদেরকে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।(ইব্রাহিমের বাবা)
–কি বলছ বাবা সত্যি?
–হ্যাঁ সত্যি।
–আমিতো অনেক মজা হচ্ছে। দাঁড়া বাবা আমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসছি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
ইব্রাহিম ফোনটা দেখামাত্রই আমি ইব্রাহিমকে বললাম...
–কিরে কি হয়েছে এত খুশি কেন?
–আর বলিস না আমার ছোট চাচার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কাল সকাল সকাল আমাদের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।
–গ্রামের বাড়ি! তোর আবার গ্রামের বাড়ি আছে নাকি?
–হ্যাঁ রে..তোকে এর আগে বলা হয়নি কারন আমি ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বড় হয়েছি গ্রামে দু একবার গেছিলাম।
–তোদের গ্রামের বাড়ি কই?
–সিরাজগঞ্জ...
–কিহ! শালা তোর বাড়ি সিরাজগঞ্জ আমাকে বলবি না?
–কেন রে কি হইছে?
–শালা আমার সিরাজগঞ্জ একটা কাজ আছে আমার কোনো রিলেটিভ থাকেনা তাই যাইতে পারছি না আর তোর গ্রামের বাড়ি ওখানে আমাকে আগে বলবি না?
–সিরাজগঞ্জ তোর আবার কি কাজ আছে?
–তোকে বলা যাবেনা একটু সিক্রেট। অনেকদিন ধরেই যাব যাব বলছি কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না।
–আচ্ছা এতই যখন সিক্রেট তাহলে একটা কাজ করতে পারিস!
–কি কাজ?
–আমাদের সাথে কাল আমার গ্রামের বাড়ি চল। আমার চাচার গিয়েও খেলি তোর কাজে পড়লি।
–(আমি ইব্রাহিম এর কথা ফেলতে পারলাম না কারণ আমি সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছিলাম এখন সুযোগ পেয়েছি হাতছাড়া করবো না) তাহলে তো খুব ভালো হয়।
–আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রেডি হয়ে নিস কাল সকালে রওনা দিব।
–আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত।
আজকে আমি অনেক খুশি কারণ জান্নাতের সাথে দেখা করার জন্য সিরাজগঞ্জ যাচ্ছি। বাসায় গিয়ে জান্নাত কে ফোন দিলাম..
–হ্যালো জান্নাত! এবার তুমি পালাবে কোথায়? এবার তোমাকে দেখেই ছাড়বো...
–মানে? কি বলছো তুমি?
–আগামীকাল আমি সিরাজগঞ্জ যাচ্ছি।(অনেক খুশি মনে বললাম)
–সত্যি আগামীকাল তুমি আমার সাথে দেখা করার জন্য সিরাজগঞ্জ আসছো?
–হ্যাঁ জান সত্যি। শুধু একদিনের জন্য না বেশ কিছুদিন থাকব।
–বাহ তাহলে তো খুব খুশির খবর। কিন্তু কোথায় আসবে কার বাসায় আসবে?
–আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে..
–তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সিরাজগঞ্জ কোথা থেকে আসলো?
–আরে বলোনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ আমি জানতামই না। আজকে জানলাম তাই আর দেরি করছি না আগামীকাল চলে যাব।
–আচ্ছা ঠিক আছে দেখে শুনে এসো।
–ওকে জান।
এভাবেই জান্নাতের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম। তারপর মা বাবাকে জানালাম আগামীকাল সিরাজগঞ্জ যাব ইব্রাহিমের চাচার বিয়েতে। মা-বাবা রাজি হয়ে যায় কারণ তারা জানে ইব্রাহিম আমার বেস্টফ্রেন্ড। রাত্রে আমার সব কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিলাম।পরের দিন সকালে আমি ইব্রাহিম এইবার আপনার মা-বাবা সবাই সিরাজগঞ্জে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা যাত্রা করার পর আমরা বাসায় পৌঁছালে। ইব্রাহিমের গ্রামের বাড়িতে যেয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই হুট করে কি যেন আমার মাথায় একটা লাঠি দিয়ে বারি দিল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটা সামনে থেকে দৌড়ে পালালো। পাশে থেকে ইব্রাহিম বলল...
–কিছু মনে করিস না দোস্ত এটা আমার পাগলি ছোট বোন। আমি অনেকদিন ধরে গ্রামে আসিনা তাই আমাকে মারার জন্য এসেছিল কিন্তু ভুল করে তোকে মেরে ফেলছে।
–তোর আবার বোন আছে?
–হ্যাঁরে। ও ছোট বেলা থেকে গ্রামেই থাকে। গ্রাম ছেড়ে নাকি ওকে যেতে মন চায়না।
–বাহ ভালো তো।
–আচ্ছা আমরা কি গেটে দাঁড়িয়ে কথা বলব না ভিতরে যাব? (ইব্রাহিমের বাবা)
–হ্যাঁ বাবা ভিতরে চলো (ইব্রাহিম)
তারপর আমরা বাসায় ভিতর যাই। ভিতরে গিয়ে দেখি মেয়েটি বসে আছে। আঙ্কেল আন্টি সবাই যে যার রুমে গেলে। ইব্রাহিম তার ছোট বোনকে বলল..
–মিম! এটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হৃদয়। ওকে একটা রুমে জায়গা করে দে.. আমাদের সাথেই থাকবে।
–ঠিক আছে ভাইয়া।
আমি মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। সত্যি মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না করেন সেটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছোট বোন। আর পারবে আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। নাকি আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেল আর বলল..
–এটা আপনার থাকার রুম। যান ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নেই।
–তোমাকে ধন্যবাদ।
মেয়েটা ওয়েলকাম জানিয়ে চলে গেল। হঠাৎই আমার আমার ফোনে কল বেজে উঠলো। জান্নাত ফোন করেছে..
–তাহলে তুমি সিরাজগঞ্জ এসেই গেলে?
–তুমি কিভাবে জানলে?
–এখন থেকে তোমার প্রত্যেকটি কদম ই আমি দেখতে পাবো..
–মানে! কিভাবে?
–সেটা তো তোমাকে বলা যাবে না। আচ্ছা তুমি এখন লাল শার্ট পড়ে আছো না?
–তুমি এগুলো কি ভাবে বলছো?
–সব জানতে পারবে। এখন থেকে তুমি আমার নজরে নজরে থাকবে। তুমি কখন কি করছো সবকিছুই আমি জানতে পারবো।
–(আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা জান্নাত এগুলো কিভাবে জানি) আচ্ছা জান্নাত তুমি কি আমাকে একটু খুলে বলবে?
–সময় হোক সবকিছু জানতে পারবো...
–এটা আবার কেমন কথা? আমার সাথে লুকোচুরি খেলছো?
–যা মনে করবে তাই।
–তোমার জন্য এত কষ্ট করে আমি সিরাজগঞ্জে আসলাম আর তুমি..
–উফ এত কথা বলো না তো। এখন ফোন রাখলাম পরে কথা হবে বাই।
এটা বলে জান্নাত ফোনটা রেখে দিল। আমিতো বিছানার উপর বসে গেলাম। বিছানার উপর বসে ভাবছি (জান্নাত আমার উপস্থিতি বুঝলা কিভাবে? আর জানলেই বা কিভাবে আমি কি পোশাক পড়ে আছি? না ঘটনাটা কেমন জানি এলোমেলো লাগছে) এগুলা ভাবতে ভাবতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নিলাম। অনেকক্ষণ পর ইব্রাহিম আমার রুমে এসে আমাকে ডেকে বলল..
–হৃদয়! দুইটা কখনো গ্রামে আসিস নি আর আমিও অনেকদিন ধরে গ্রামে আসেন চল বাহিরে থেকে একটু ঘুরে আসি..
–আচ্ছা ঠিক আছে চল।
আমি আর ইব্রাহিম বাড়ি থেকে বের হতে যাবো এমন সময় মিম সামনে এসে দাড়িয়ে বলল..
–ভাইয়া কোথায় যাচ্ছিস?
–এইতো একটু বাহিরে ঘুরতে যাব কেন?
–তুই তো অনেকদিন যাবত গ্রামে আসিস না গ্রামের রাস্তাঘাট কি তোর মনে আছে?
–ওমমম না তো। আমাকে কথা একদমই মনে ছিল না।
–আচ্ছা যাওয়ার সময় সুজন কে সাথে নিয়ে যাস।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
সুজল ইব্রাহিমের বড় চাচার ছেলে। কিন্তু বয়সে আমাদের ছোট। সুজন কে নিয়ে গ্রামে ঘুরছি। সত্যি গ্রামের দৃশ্য অনেক সুন্দর। আশেপাশে ক্ষেত-খামার আর তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা। খুব মজা হচ্ছিল। চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। সত্যি শহরের সাথে গ্রামের কখনো তুলনা হয়না। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ জান্নাতের একটা এসএমএস আমার ফোনে আসলো....
Next part : part 2 link
ধন্যবাদ! আমি আনন্দিত যে আপনি গল্পটি পছন্দ করেছেন। আমি চেষ্টা করব যেন আপনার জন্য আরও ভাল গল্প লিখতে পারি। আপনি কি কোনও বিশেষ ধরনের গল্প চান? যেমন—রোমান্স, অ্যাডভেঞ্চার, মিস্ট্রি, বা অন্য কিছু? আমাকে জানান, আমি আপনার জন্য একটি নতুন গল্প লিখতে প্রস্তুত!
Post a Comment