গল্পঃ - বেস্ট ফ্রেন্ড এর বোন যখন গার্লফ্রেন্ড
আমি মিমের রুমে গিয়ে মিমের কাঁধে হাত রাখলাম। আমার হাত রাখা দেখে মিম বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। আমি মিমের গালে হাত রেখে বললাম...
–লজ্জা পাইছো?
–হুম।
–তুমি ভাবতেও পারেনি কিভাবে ধরা পড়ে যাবে তাই না?
–হুম। আচ্ছা তুমি কিভাবে বুঝলে যে আমি জান্নাত?
–ওইটা গোপন সিক্রেট বলা যাবে না।
–এইযে বলো বলছি..
–না বলব না।
–তুমি বলবে না?
–আচ্ছা তুমি এমন করতেছ কেন? আমি যেভাবেই হোক জানতে পারছি তোমাকে সেটা জানতে হবে কেন?
–না আমি শুনবো তুমি বলো।
–আচ্ছা বলতেছি। যখন তোমার সাথে কথা বলছিলাম তখন কথা বলতে বলতে ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে ছিলাম। আর তখন দেখলাম তোমার রুম থেকে শাওন আসতেছে। তখনই বুঝতে পেরে গেছি।
–ওহো তুমি তো ভালো না। তোমার আড়িপাতার অভ্যাস আছে।
–তোমাকে ধরার জন্যই তো আমাকে আড়িপাতে হয়েছে। কতদিন হল এসেছি তুমি দেখায় দিলে না।
–যাও তোমার সাথে কোন কথা নেই।
তাই বলে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানি কে ঘুড়িয়ে আমার সামনে নিয়ে এসে বললেন...
–এই পাগলি! আজ প্রথম তোমার সাথে আমার সামনাসামনি পরিচয় হলো আর তুমি এভাবে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে?
–হুম থাকবোই তো তোমার কি?
এটা শোনার পর আমি জান্নাত কে আমার বুকের মধ্যে টেনে নিলাম।
–ওর এবার বল আর রেগে থাকবে?
–এভাবে ভয়াভয় ধরছে কেন? আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস কি নেই নাকি?
–হুম আছেই তো দেখবে?
–দেখাও দেখি।
তাই বলে জান্নাত কে খুব জোরে জড়িয়ে ধরি। দুজনে অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছি। অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর মীম আমাকে ছাড়িয়ে বলল...
–ওই জান এখন যাও আবার কেউ দেখে ফেলবে।
–আচ্ছা জান।
তারপর মিমের রুম থেকে বেরিয়ে আমি আমার রুমে চলে আসি। রাতে ঘুম ধরছিলো না তাই মীমকে ফোন করে ছাদে আসতে বলি। আমিও ছাদে চলে যাই। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একটু পর মিম ছাদে আসলো। দুজনে ছাদে বসে গল্প করছি। গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছে তারপর আমি মীম কে বললাম..
–আচ্ছা জান এখন ঘুমাতে হবে কালকে আবার বিয়ে অনেক কাজ আছে।
–হুম তাই তো..
–আচ্ছা চলো এখন যাই।
তাই বলে আমরা দুজনে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসি। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে বসে আছি। আমার সামনের চেয়ারে নিম বসা। খাওয়ার সময় মীম বারেবারে ওর পা দিয়ে আমার পায়ে পারা দিচ্ছিল আর হাসছিল। আমি হাসছিলাম। পানি তার পাগলামি গুলো খুব ভালো লাগে।
খাওয়া-দাওয়া শেষে ডেকোরেশন এর কাজে লেগে পড়ি। প্রথমে পুরো বাড়িটা সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করে সাজায়। দুপুর বেলা গোসল করে সবাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়নি। মিম আজকে অনেক সুন্দর ভাবে সেজেছে। মীমকে দেখে চোখ সরাতে পারছি না। সত্যি মীমকে দেখতে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আমি মিম এর কাছে গিয়ে বললাম..
–ওই এত সুন্দর করে সেজেছে কেন?
–কেন দেখতে ভালো লাগছে না?
–ভালো লাগছে না মানে মনে হচ্ছে আজকে বিয়েটা তোমার আর আমার।
–কি যে বলোনা।
–সত্যি আজকে তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
–তোমার জন্যই তো এত সুন্দর করে সেজেছে।
–তাই?
–হুম।
আমরা কথা বলছিলাম এর মধ্যে বরকে রেডি করা হয়। তারপর আমরা কনের বাড়িতে যাওয়া উপলক্ষে রওনা দেই।
অনেকক্ষণ যাত্রা করার পর কনের বাড়ির সামনে আমরা। কনের বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই দেখলাম অনেক সুন্দর করে গেট সাজানো হয়েছে এবং তার সামনে গেটে কনেপক্ষের লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেটের সামনে দাঁড়ায় আর বরকে কনেপক্ষের লোকজনেরা মিষ্টি খাওয়ায়। আর তারপর টাকার আবদার করে।
–দুলাভাই আমাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য 20 হাজার টাকা দিতে হবে না হলে গেট ছারছীনা।
–এটা আবার কেমন কথা? টাকা কি গাছের পাতা নাকি হ্যাঁ? বললে না পেয়ে গেলেন। 20 হাজার টাকা চোখে দেখেছেন?(ইব্রাহিম মজা করে বলল)
_না ভাইয়া দেখি নাই তাই তো আজকে চাইতেছি। যদি গেটের ভিতরে প্রবেশ করতে চান তাহলে টাকা দিতেই হবে।
–টাকা নেবেন ঠিক আছে কিন্তু এত বেশি চান কেন একটু কমায় নেন (আমি বললাম)
–কোন কম নেই আমরা 15 জন আছি সবারিতো ভাগ লাগবে নাকি?
–প্লিজ একটু সেক্রিফাইস করেন। একটু ডিসকাউন্টে দেন...(আমি বললাম)
–কোন ডিসকাউন্ট দেওয়া যাবে না।
আমি চাচার কানেকানে বললাম..
–চাচা পকেট থেকে 5000 টাকা বের করে চুপি চুপি ওদের হাতে দিয়ে দেন।
–আচ্ছা দিচ্ছি।
চাচা পকেট থেকে টাকা বের করে ওদের হাতে দেয় ওরা বলে..
–কত দিয়েছেন দুলাভাই?
–দেখেন না কত দেওয়া হয়েছে (আমি বললাম)
–একি এখানে তো মাত্র 5000 টাকা! মাত্র 5000 টাকার জন্য তো এত বড় গেট সাজনি।
–প্লিজ এত বাড়াবাড়ি করেন না যা দেওয়া হয়েছে তাই রাইখা দেন।
–না না আমরা কোন কথাই শুনব না। আচ্ছা ঠিক আছে একটু কমিয়ে দিলাম 18000 টাকা দেন।
–পাগল হয়েছেন নাকি আপনারা?
–আমরা কিছু জানি না টাকা পেলে তবেই গেট ছাড়বো তাছাড়া গেট ছারছীনা।
অনেকক্ষণ ধরে তর্কাতর্কি করতে করতে শেষ পর্যন্ত 9000 টাকা ম্যানেজ করে ফেললাম। উফ কি ডাকাত রে ভাই শুধু গেট ধরেই 9000 টাকা নিয়ে নিল। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আমরা বসে আছি। একটু পর বিয়ে পড়ানো কাজ শুরু হল। আলহামদুলিল্লাহ দেখতে দেখতে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেল। বিয়ে শেষে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু। কনেপক্ষ দেখছি খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন করেছে। অনেক রকম আইটেম করা হয়েছে। সবাই অনেক মজা করে খাওয়া দাওয়া করা হলো। খাওয়া-দাওয়া শেষে বর-কনেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরি। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই বাসায় ফিরেই বর-কনেকে তাদের বাসর ঘরে ঢুকিয়ে আমরা সবাই যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম ধরছেনা। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকার পরো ঘুম ধরছিলো না। না পেরে জান্নাত কে ফোন করে ছাদে আসতে বললাম। দুজনের ছাদে গিয়ে বসে আছি।
–আজ তো চাচার বাসর রাত।
–হুম তো?
–এই বাসর রাত নিয়ে মানুষের কত পরিকল্পনা থাকে তার কোন শেষ নেই।
–থাকবেই তো। রাতে দুজন দুজনকে খুব ভালোভাবে জেনে নেয় বুঝে নাই ভালোবাসা আদান-প্রদান করে।
–আমাদেরও এমন হবে তাইনা?
–যা দুষ্টু।
–ওই কিছু ভালো লাগছে না একটা পাপ্পি দাও না..
–খুব লোভ ধরেছে তাই না?
–একটু খানি। দাও না জান..
–দিনদিন তোমার চাহিদা কিন্তু বেড়েই যাচ্ছে।
–কি দেবে না তো?
–না দেব না।
–ওকে
তাই বলে ছাদ থেকে নেমে আসতে ধরলাম এমন সময় জান্নাত আমার হাত টেনে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে ভালোবাসা ছোঁয়ায় কে দিলো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে দেয়।
–উফ আরেকটু হলেই তো মরেই যেতাম। নিঃশ্বাসটা থেমে এসেছিল (হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম)
–কি আর লাগবে?
–না জান আজকে আর চায়না ( হাঁপাতে হাঁপাতে বলছি)
–আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চুপচাপ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।
–আচ্ছা জান।
তারপর সোজা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে সবাই বর-কনের দিকে চেয়ে আছে। সবাই খুব হাসাহাসি করছে আর বলছে...
–রাত কেমন কাটলো?(বরের ভাবী বলল)
–উফ ভাবি তুমি না। এসব নিয়ে কেউ জিজ্ঞাসা করে? (বর বলল)
–আয় হায় আমার দেবর তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
চাচার কোন কথা বলতে পারছে না। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে চাচা। আর চাচীর তো কোন কথাই নেই।
অনেকক্ষণ মজা করার পর বর-কনেকে সকালের নাস্তা করানো হয় তারপর আমরা সবাই নাস্তা করি। নাস্তা করে কাজে লেগে পড়ি কারণ বিকেলবেলা কনে পক্ষ থেকে আমাদের বাড়িতে আসবে। খাওয়া-দাওয়া সব ব্যবস্থা করতে হবে। ইব্রাহিমকে বাবুচিয়ান তে পাঠিয়ে দেই। ইব্রাহিম বাবুচিয়ানা রান্নার কাজে লেগে পড়ে। আমিও রান্নার কাজে লেগে পড়ি। দুপুরের মধ্যে সব রান্না শেষ করে ফেলি।আমাদের রান্না শেষ হতে হতেই মেয়ে পক্ষ বাড়িতে চলে আসে। তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু করে দেই। সবার আগে সকল মেয়ে পক্ষকে খাওয়াই। তারপর এলাকার লোকজনকে খাওয়ায়। সবাইকে খাওয়ানোর শেষে রাতে কনে পক্ষের লোকজন বর-কনেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
বর-কনেকে কনেপক্ষের সাথে পাঠিয়ে বাড়িতে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে সবাই রেস্ট নিতে যে যার রুমে চলে যায়। সারাদিন কাজ করার পর শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। তাই রেস্ট নেওয়ার জন্য রুম চলে যায়। বিছানায় শুয়ে আছি আর কি যেন ভাবছি। হঠাৎ কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না। সকালবেলা জান্নাতের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।
–এইযে মহারাজ ঘুম থেকে উঠো নি। সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে..
–কাহ্! কয়টা বাজে?
–৯টা বাজে আর আপনি পরে পরে ঘুনাচ্ছেন।
–কি বলো কখন এতো বেলা হয়ে গেল?
–আপনি তো পরে পরে ঘুনাচ্ছিলেন কি ভাবে জানবেন!
–তাওতো কথা। আচ্ছা তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
–ওকে।
তারপর মিম রুম থেকে চলে যায়। আর আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা টেবিল এ চলে যাই। নাস্তার টেবিলে বসে জান্নাত আর আমার চোখে চোখে কথা হচ্ছিল। এমন সময় খেয়াল করলাম ইব্রাহিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আর কিছু করলাম না চুপচাপ নাস্তা করে রুমে চলে আসলাম। অনেকক্ষণ ধরে রুমে বসে আছি কিছু ভালো লাগছে না। তাই ছাদে চলে গেলাম। ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কেউ একজন পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি জান্নাত...
–কি ব্যাপার তুমি কখন আসলে?
–দেখলাম তুমি ছাদে আসছো তাই পিছনে পিছনে চলে আসলাম।
–তো পিছন থেকে এইভাবে জড়িয়ে ধরল কেন?
–কেন ভালো লাগছে না বুঝি?
–ভালো লাগবে না কেন! এই দিনের বেলা সাথে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো কেউ যদি দেখে তাহলে সমস্যা হবে তো!
–কেউ দেখে দেখুক আমার বয়েই গেছে তাতে।
–পাগলামি করো না একটু বোঝার চেষ্টা করো।
–তুমি চুপ থাকবে?
–দেখো জান্নাত একটু বোঝার চেষ্টা করো। এখন দিন আর আমরা এখন ছাদে আছি। যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।
–তুমি চাও না তো আমি তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকি। আচ্ছা ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার মতো আমি গেলাম।
এটা বলে মীম যখন পেছন ফিরে ছাদ থেকে নেমে জেতে চাইলো পিছনে ফিরে মিম চমকে গেল। আমি পিছনে তাকাতেই দেখি ইব্রাহিম দাঁড়িয়ে আছে..
–ইব্রাহিম তুই এখানে কখন আসলি?
–কেন ডিস্টার্ব করলাম বুঝি?
–দোস্ত এইসব কি বলিস?
–মিম তুই নিজে যা...
–ভাইয়া তুই হৃদয় কে কিছু বলবি না।
–তোকে নিচে যেতে বলছি তুই নিচে যান (একটু ধমক দিয়ে)
মিম ইব্রাহিমের ধমক খেয়ে নিজে চলে যায়। এদিকে ইব্রাহিম আর আমি ছাদে রয়ে গেলাম। ইব্রাহিম আমাকে বলছে..
______________________________________
গল্প পড়ার সাথে সাথে যদি একটা ফলো দিয়ে রাখেন একটা ফলো দেওয়াতে আপনাদের কোন খতি হবে মনে হয় না।
কাওকে না কাওকে ফলো দিয়েছেন সবার সাথে মিলিয়ে আমার এই ছোট্ট পেইজ টাকে ফলো দিলে খুশি হবো।
সবসময় সুন্দর গল্প উপহার দিতে চেষ্টা করবো।
নিউ লেখক আবির...
______________________________________----
–আমি প্রথম থেকে যা সন্দেহ করেছিলাম তাই সত্য হলো।
–দোস্ত আমার কথা শোন..
–তুই আর কি বলতে চাস না হ্যাঁ! তোকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম আর তুই আমার সাথে এমনটা করলি!
–দোস্ত শোন! জান্নাতের সাথে আমার অনেক আগের থেকে পরিচয়। আমাদের প্রথমে ফেসবুকে আলাপ হয়। তারপর আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশ্বাস কর আমি একদমই জানতাম না যে জান্নাত তোর বোন। আমিতো জান্নাত কে কখনো দেখছিলাম না। জান্নাত কে আমি না দেখেই ভালোবেসে ছিলাম। তোর সাথে এখানে আসার পরে আমি জানতে পারিনি যে তোর বোন মিম আমার জান্নাত। আমিতো পরশুদিন জানতে পারলাম যে এটা আমার সেই জান্নাত যাকে আমি ভালোবাসি।
–দেখ হৃদয় তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার ছোট বোন মানে তোর ছোট বোন। আমি আমার বোনকে অনেক ভালোবাসি। আর তোকে অনেক ভালোবাসি। আমি কোন কারণে আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে চাই না। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তুই বুঝতে পারছিস?
–দোস্ত আমি জান্নাত কে অনেক ভালোবাসি রে। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না কিছুতেই (কান্না করতে করতে বললাম)
–কিছুই করার নাই। প্লিজ তো জান্নাত কে ভুলে যায়।
–কিভাবে ভুলে যাব তুই বল!(কাঁদতে কাঁদতে বলছি)
–আমি কিভাবে বলবো? আমি শুধু এটুকুই বলবো তুই মীমকে ভুলে যা।
–আচ্ছা কাকে ভুলে যাব তুই বল? যাকে আমি না দেখে ভালোবেসেছি তাকে? যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তাকে? যে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো জীবন দান করল? যে আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে সারাজীবন কাটানোর প্রতিজ্ঞা করেছে তাকে? তুই বল আমি কিভাবে ভুলে যাব? (খুব জোর কান্না করতে করতে ইব্রাহিমের হাত ধরে বললাম)
–শোন হৃদয়! তোকে সব কিছু ভুলে মীমকে ভুলে যেতে হবে। আমি আমার জীবনকে কষ্ট দিতে পারব না। আর আমি কখনোই আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে চায়না কিছুতেই। প্লিজ তোকে আমার বন্ধুত্বের কসম (আমার হাত ইব্রাহিমের মাথায় নিয়ে বলল)
–তুই এটা কি করলি? তুই কেন বললি এটা? আমি জান্নাতকে কিভাবে ভুলে যাব? (খুব জোরে কান্না করছি আর বলছি। আমার চোখের জল গুলো টপটপ করে ইব্রাহিমের পায়ে পরছে)
–হৃদয় তুমি নিজেকে শক্ত কর। আর হ্যাঁ আমি তোকে যে এসব বলেছি তা যেন মিম কিছুতেই না জানতে পারে।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
–আচ্ছা চল এখন নিচে যাই।
–প্লিজ তুই যা আমাকে একটু একা থাকতে দে।
–ঠিক আছে, কিন্তু কথাটা মনে রাখিস।
–তোকে বললাম তো তুই যা এখান থেকে।
–ওকে আমি যাচ্ছি।
তাই বলে ইব্রাহিম নিচে চলে গেল। আমি একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুতেই চোখের জলকে থামাতে পারছিনা। আমি জান্নাত কে কিভাবে ভুলে যাব? যে আমার নিঃশ্বাস, যার সাথে একটা মুহূর্ত কথা না বললে আমার খুব কষ্ট হয় তাকে কি করে ভুলে যাব? ইব্রাহিম তুই আমাকে কেন আমাদের বন্ধুত্ব কসম দিলি! আমি কি জান্নাত কে কিছুতেই ভুলতে পারবো না রে.... প্লিজ তুই কসম টা উঠিয়ে নিয়ে...
অনেকক্ষণ ধরে ছাদে একা একা দাড়িয়ে কান্না করছি। জানিনা পাগলিটা নিচে কি করছে। যদি আগে জানতাম জান্নাত ইব্রাহিমের বোন তাহলে হয়তো কখনোই তাকে ভালোবাসতাম না। কিন্তু আমি তো জান্নাত কে আগে থেকেই ভালোবাসি তাহলে কেন হচ্ছে আমার সাথে এমন টা?
জান্নাত তুমি আমাকে মাফ করে দিও। হয়তো আর কখনো তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারব না।
অনেকক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে কান্না করার পর নিজেকে অনেক দুর্বল মনে হচ্ছে। তাই ছাদ থেকে নেমে রুমে গিয়ে শুয়ে আছি।ব্যাগে কিছু ঘুমের ঔষধ ছিল সেগুলো খেয়ে ঘুমিয়ে আছে যাতে জান্নাত আমাকে ডাকলে আমি সাড়া দিতে পারি। আমি ঘুমিয়ে আছি গভীর ঘুমে। রাত তিনটায় ঘুম ভাঙলো, ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার পায়ের কাছে কে যেন বসে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। আমি ভালো করে চোখ ঘষে নিয়ে তাকিয়ে দেখি জান্নাত...
–কি ব্যাপার জান্নাত তুমি এত রাতে এখানে?
–আমি সরি হৃদয়! তখন তোমার কথা আমি শুনিনি। তখন যদি তোমার কথা আমি শুনতাম তাহলে আজ ভাইয়ার কাছে ধরা খেতাম না। (কান্না করতে করতে বলছে)
–আরে পাগলি কান্না করো কেন? একদিন না একদিন সবাই তো জানতেই পারতো তাই না? ভালো হইছে ইব্রাহিম জানতে পারছে, যদি আঙ্কেল-আন্টি কেউ দেখতে পেত তাহলে আমাকে অনেক খারাপ ভাবতো।
–এখন আমি কি করব? মা-বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাবো?
–পাগল নাকি? এখন আঙ্কেল-আন্টি এসব জানতে পারলে আমাদের ভুল বুঝবে। আঙ্কেল আন্টি কখনোই এটা মেনে নেবে না কারণ আমি একটা বেকার ছেলে। কোন মা বাবা তার মেয়েকে বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে চাইবে না।
–তাহলে এখন কি করব? (আমার হাত ধরে কান্না করতে করতে বলছে)
–প্লিজ কান্না করো না। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারছিনা (একটু কম্পিত কণ্ঠে বললাম)
–তাহলে এখন কি করবো তুমি বলো? (কান্না করেই যাচ্ছে পাগলী)
–দেখো জান্নাত এখন আর আমাদের কিছু করার নেই। প্লিজ তুমি এখন আমাকে ভুলে যাও।
–কিহ্! আমি তোমাকে ভুলে যাবো? (হাসতে হাসতে বলল)
–জান্নাত প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমাদের সম্পর্কটা কন্টিনিউ করা আর সম্ভব না। ইব্রাহিমকে আমি আমার ভাইয়ের চেয়েও অনেক বড় কিছু ভাবি। ইব্রাহিম কষ্ট পাবে এমন কোন কাজ আমি করতে পারবোনা। প্লিজ জান্নাত তুমি আমাকে ভুলে যাও।
–আমি কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারবো না। তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারি না তুমি জানো না? (আমার শার্টের কলার ধরে কান্না করতে করতে বলল)
–প্লিজ জান্নাত এমন পাগলামি করো না।
–কেন তুমি আমার জীবনে আসলে? কেন তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসলে? কেন তুমি আমায় এতটা পাগল করলে? কেন এখন তুমি আমায় ভুলে যেতে বলছ?
–জানিনা।
–আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না?
–কি কাজ?
–চলনা আমরা কোথাও পালিয়ে যাই।
–কিছুতেই না! আমি আমার মা-বাবা কে কষ্ট দিতে পারব না। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে কষ্ট দিতে পারব না। আমি তোমার মা-বাবাকে কষ্ট দিতে পারব না। কারণ মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখে থাকা যায় না। আর তাই প্লিজ আর পাগলামি কোরো না এতদিন যা হয়েছে ভেবে নাও সব কিছু ভুল ছিল। মনে করো তোমার সাথে আমার কোনদিন দেখাই হয়। তোমার সাথে কোনদিন আমার আলাপ হয়নি। তোমার সাথে কোন রিলেশন ই ছিল না আমার।
–আমি কিছুতেই পারব না এটা (পাগলিটা খুব কান্না করছে। জান্নাতের চোখের জলে বিছানা ভিজে থপথপে হয়ে গেল)
–এই পাগলি! প্লিজ আর কান্না করো না।
–আচ্ছা তুমি বলো তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারবে?
–হ্যাঁ পারব না? (মিথ্যা বললাম শুধু পাগলি টাকে ভোলানোর জন্য)
–সত্যি তুমি পারবে আমাকে ভুলে থাকতে? (একটু আশ্চর্য পূর্ণ হয়ে)
–কেন পারব না! তোমাকে ভুলে থাকা তো কোন ব্যাপারই না। (বুকের ভেতর হাজার কষ্ট চাপা দিয়ে মুখে একটু হাসি নিয়ে জান্নাত কে বললাম) দেখো আমি যদি তোমাকে ভুলে থাকতে পারি তাহলে তুমি পারবে না কেন?
–তুমি তো একটা বেইমান! তুমি আমাকে ভালোই বাসোনি। যদি ভালবাসতে তাহলে ভুলে যাওয়ার কথা বলতে না।(অনেকটা রাগী কন্ঠে বলল)
–এইতো সত্যটা ধরতে পারছ.. আমি তো তোমাকে মন থেকে ভালবাসিনি। এতদিন তো শুধু অভিনয় করেছি (একটু হাসতে হাসতে বললাম)
–তোমার মতো বেঈমান কে ভালবাসাটা আমার জীবনে সবথেকে বড় ভুল।
–এখনো সময় আছে চাইলে ভুলটা সংশোধন করে নিতে পারো।
–হ্যাঁ তাই করব। একটা বেইমান কে ভালোবেসে ছিলাম এটা ভুলে যেতে আমার বেশি সময় লাগবে না।
–আমিও তো এটাই চাই তুমি আমাকে ভুলে যাও।
জান্নাত দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যায়। সত্যি আমি অনেক বড় বেইমান। আমি বন্ধুত্বটা টিকিয়ে রাখার জন্য আমার ভালোবাসাটা কবর দিলাম। সত্যি কিছু কিছু ভালোবাসা এমনই কিছু সম্পর্কের কাছে হার মেনে যায়। আমার ভালোবাসাটাও না হয় এভাবেই হারিয়ে গেল। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কি করবো আমার কিছু করার নেই। সত্যি আমি ইব্রাহিম কে কষ্ট দিতে চাই না। ইব্রাহিম কে আমি অনেক ভালবাসি।
রাতে ভাবছি, (যদি আমি এখানে থাকি তাহলে রোজ জান্নাতের সাথে আমার দেখা হবে। আর জান্নাতের সাথে আমার দেখা হলে জান্নাত আমাকে কিছুতেই ভুলতে পারবে না আর আমিও জান্নাত কে কিছুতেই ভুলতে পারবো না। তাই সব থেকে ভালো হবে আমি কাল সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে এখান থেকে চলে যাব।)
কথামতো পরের দিন সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে আমি ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু ঢাকায় আসার আগে আমি রাত্রে একটা চিঠি লিখি। আর চিঠিটা গোপনে জান্নাতে টেবিলের উপর রেখে আসি।
পরদিন সকালে জান্নাত ঘুম থেকে উঠে হৃদয়কে খুঁজতে যায় কিন্তু হৃদয়কে রুমে খুঁজে পায়না। পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে কিন্তু কিছুতেই হৃদয়ের দেখা পায় না। খুব হতাশা নিয়ে নিজের রুমে ফিরে। রুমে গিয়ে বিছানায় বসে কান্না করতে লাগলো। হঠাৎ এমন সময় টেবিলের ওপর চোখ পরলো। জান্নাত দেখতে পেল টেবিলের উপর একটা চিঠি পড়ে আছে। জান্নাত দৌড়ে গিয়ে চিঠিটা উঠিয়ে খুলে চিঠিটা পড়তে অবাক হয়ে গেল.....
Next part : part 4 link
ধন্যবাদ! আমি আনন্দিত যে আপনি গল্পটি পছন্দ করেছেন। আমি চেষ্টা করব যেন আপনার জন্য আরও ভাল গল্প লিখতে পারি। আপনি কি কোনও বিশেষ ধরনের গল্প চান? যেমন—রোমান্স, অ্যাডভেঞ্চার, মিস্ট্রি, বা অন্য কিছু? আমাকে জানান, আমি আপনার জন্য একটি নতুন গল্প লিখতে প্রস্তুত!
Post a Comment